ইমন সরকার, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
সাধারণত রাত নামলেই থেমে যায় প্রশাসনিক তৎপরতা। কিন্তু ভালুকায় দেখা গেল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য—বেহাল রাস্তায় জনদুর্ভোগ দেখে ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সিদ্ধান্ত নেন: আজকের মতো ফিরবেন না, যতক্ষণ না সংস্কারকাজ শেষ হয়।
এই অসাধারণ উদ্যোগের নেতৃত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তাঁর সরাসরি তদারকিতে চলেছে জরুরি রাস্তা সংস্কার—যা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে প্রশংসার বিষয়।
পৌরসভার ১ ও ২ নং ওয়ার্ড পরিদর্শন শেষে ইউএনও যান ভালুকা হাসপাতাল রোডে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের অভাবে জনদুর্ভোগের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। প্রায় ৮-৯টি গ্রামের মানুষ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াতকারীদের একমাত্র চলাচলের পথ এটি।
উল্লেখ্য, বহুদিন ধরেই সংশ্লিষ্ট শাখাকে এই রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন ইউএনও। এ কাজের টেন্ডার হয় ৫ আগস্টের আগেই, কিন্তু যে ঠিকাদার দায়িত্ব পান, তিনি ৫ আগস্টের পর একটি মামলায় আত্মগোপনে চলে যান। ফলে কাজটি অচল হয়ে পড়ে এবং ধীরগতিতে চলতে থাকে, যার ফলে প্রায় ৮-৯টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও হাসপাতালের রোগী-স্বজন সবাই চরম দুর্ভোগের শিকার হন।
রবিবার (১ জুন) বিকেলে রাস্তার অবস্থা দেখে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেন:
“আজকে এ কাজ শেষ না করে যাব না,” বলে বসে যান। তারপর নিজেই দায়িত্ব নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ইট, বালু এনে কাজ শুরু করান।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পাশের দোকান থেকে কলা-বিস্কুট এনে সঙ্গীদের সঙ্গে মাঠেই দুপুরের খাবার সারেন ইউএনও। কাজ বন্ধ না রেখে একে একে সব সমস্যার সমাধানে ছুটে যান বিভিন্ন এলাকায়—পোস্ট অফিস রোড, ৪ নম্বর ওয়ার্ডসহ অন্যান্য স্থানে।
সাথে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের মধ্যে ক্লান্তি ও ক্ষুধার যন্ত্রণা চলে আসলেও ইউএনও হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের মাঝে ছিল না বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ, ছিল না কোনো বিরক্তি কিংবা উদাসীনতা। বরং ছিল দায়বদ্ধতা, ছিল মানুষের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা।
রাত গভীর হতে থাকে। একে একে সবাই ক্লান্ত হলেও ইউএনও ছিলেন রাস্তার ওপর—পর্যবেক্ষণে, নির্দেশনায়, তদারকিতে। রাত ১টা পর্যন্ত থেকে নিশ্চিত করেন, রাস্তাটি যেন চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠে। তখন আশপাশ নিস্তব্ধ, কিন্তু এই কর্মপাগল কর্মকর্তার মনোযোগ ছিল উন্নয়নের ওপর।
এই ঘটনা প্রমাণ করে—একজন সৎ, কর্মঠ এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাইলে জনগণের জীবনে কত বড় পরিবর্তন আনতে পারেন।
হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ শুধু একজন ইউএনও নন, তিনি এখন ভালুকাবাসীর আশা ও আস্থার নাম। তাঁর নেতৃত্বে ভালুকার উন্নয়ন আজ আর স্বপ্ন নয়—এটা এখন বাস্তবতার পথে।
ভালুকাবাসীর কণ্ঠে আজ একটাই কথা—
“আমরা ভাগ্যবান এমন একজন ইউএনও পেয়েছে।”
এই কর্মের স্মৃতি ভালুকাবাসীর হৃদয়ে গেঁথে থাকবে অনেকদিন।