বিশ্ব পাগল তোর বদনের রূপ দেখে মা
শিকদার বাসীর
“””””””””””””””””””””””””
বিশ্ব পাগল তোর বদনের রূপ দেখে মা
ফজরে ঐ নকীব মুখে শুনে আজান
নামাজ পড়ে লাঙল কাঁধে ছুটে বাজান
মাগরিবে সেই চাষাবাদের হয় যে ক্ষেমা ।
মক্তবে যায় ছেলে-মেয়ে রোজ বিহানে
লাল ঝুঁটির ঐ মোরগ ডেকে নিদ্রা ভাঙায়
নিশিতে মাছ ধরে জেলে ফিরে ডাঙায়
জন্মে আমি ধন্য মা’গো এই মিহানে ।
শিশির হাসে ঝলমলে ঐ ঘাসের আগায়
মিষ্টি কাঁচা খেজুররসে ডুবায় দু’মুখ
ছোট-বড় সবাই স্বাদে দেয় যে চুমুক
হিম কুয়াশার এই প্রহর মুগ্ধতা জাগায় ।
বৈঠা হাতে গায় মাঝি ভাটিয়ালি, কাজরি
গরু, মহিষ, ভেড়া চড়ায় মাঠে রাখাল
খেতে মজা পেঁয়াজ, মরিচ, নুনে পাখাল
আমার দেশে ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে হাজরি ।
পাকা কাঁঠাল, আমের গন্ধে হই যে মাতাল
ঘরে উৎসব রকমারি পিঠা-পুলির
গাঁ-শহরে আড়ং জমে মিন্তি, কুলির
সোনালি গম, পাঁট, ধানে ঐ ভরে চাতাল ।
কাঁচা তালের বিচি, খাঁটি দুধের সরজ
কাঠফাটা রোদে সবুজ ঐ মাঠের হাওয়া
ক্লান্ত কোনো পথিকের এক শীতল দাওয়া
সারি সারি সুপারী গাছ, পানের বরজ ।
উঠোনকোণে ঝিঙে ফুলের হলুদ বরন
মনোলোভা গন্ধরাজ, শেফালী, টগর
বর্ষা-বিধৌত নও রূপে সবুজ নগর
আলতা রাঙা শ্যাম-বালিকার নগ্ন চরণ ।
রাণীর মুকুট মাথে তাহার গুণসমুদয়
চুয়ে চুয়ে পড়ে রূপের ঘটি উপুড়
শ্বেত রঙের-ই বাদল ঝরে টাপুরটুপুর
মেঘের পরে সাতরঙা রামধনুর উদয় ।
জাংলাতে করলা, কদু, শিম, কুমড়া
শিশু-কিশোর মাতে নানানরকম খেলায়
পাখপাখালির নীড়ে ফেরা সন্ধ্যাবেলায়
নববধূ নায়রবিহীন মুখ করে গুমরা ।
নামতা লিখি চকশ্লেটে কুপির আলোয়
বিছিয়ে মায়েরই হাতে বুনন মাদুর
চাঁদ-তারকার সাথে শুনি কিচ্ছা দাদুর
ঝিঁঝিঁ ডাকে, জোনাক জ্বলে ঘোর-কালোয় ।