সাভারে পাতি নেতার স্ত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় যুবক গ্রেফতার, ওই যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার অভি খায়রুল ইসলাম।
সাভারের কথিত এক পাতি নেতার স্ত্রীকে (২৪) ধর্ষণের অভিযোগে রকি মন্ডল নামে তারই এক ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার ২৬ নভেম্বর গভীর রাতে মজিদপুর এলাকার বাসিন্দা ওই পাতি নেতার ভাড়া বাসা থেকে রকি মণ্ডলকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ। পরে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর একই দিন দুপুরে রকি মন্ডলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রকি মন্ডল (২৮) রাজশাহীর পুঠিয়া থানার সরিষাবাড়ী গ্রামের ফুলাল মন্ডলের ছেলে। তিনি গত এক বছর যাবত ওই কথিত পাতি নেতার লাইসেন্সবিহীন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক উম্মে হানি বেগম মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তবে ধর্ষণ মামলার আসামি রকি মন্ডল সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে নিজের দায় অস্বীকার করে ওই পাতি নেতার স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের মালিক ওই পাতি নেতার স্ত্রীকে পরকীয়া প্রেমিক জয়ের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত অবস্থায় দেখে ফেলায় তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় তার স্বামীকে বিষয়টি জানালে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। এরপর স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই পাতি নেতা সহ কয়েকজন তাকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত থেকে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সময় মত তাকে উদ্ধার করে প্রাণ রক্ষা করায় এবং মামলার বাদী গৃহবধুর অভিযুক্ত স্বামী ওই পাতি নেতাকে হেফাজতে নেওয়ায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান রকি মন্ডল।
এদিকে গ্রেপ্তারকৃত রকি মন্ডলকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তার ফুপু সেলিনা বাদী হয়ে রবিবার বিকেলে সাভার মডেল থানায় ওই পাতি নেতা ও তার স্ত্রীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, ওই পাতি নেতা (৩৮) ও তার স্ত্রী (২৪), তাদের সহযোগী আরিফ (২০), ইব্রাহিম ওরফে রিংকু (২৬), শরীফ (২৭) সহ অজ্ঞাত তিনজন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর রাত ১১ টায় রকি মন্ডলকে ইমারজেন্সি ইন্টারনেট লাইন দেওয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে নেন কথিত ওই পাতি নেতা। অতঃপর তিনি তার স্ত্রীর সামনে রকি মন্ডলকে জিজ্ঞেস করে” তুই আমার বউয়ের ব্যাপারে কি বলছস.? তখন রকি মন্ডল “কিছু বলি নাই” বলার সাথে সাথে উল্লেখিত অভিযুক্তরা রকি মন্ডলকে একটি রুমে তিন দিন আটক রেখে লাঠি সোটা, মরিচ বাটার পুতা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফোলা ও ছেচা যখম করে। পরে রকি মন্ডলের হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখে। এ সময় রকি মন্ডল পানি চাইলে তাকে পানি না দিয়ে প্রস্রাব করিয়ে প্রস্রাব খাওয়ানোর পর আরো মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও মামলার বাদী ও কথিত পাতি নেতার স্ত্রী রকি মন্ডলের পিঠের বিভিন্ন স্থানে কামড় দিয়ে জখম করে।
অভিযুক্ত পাতি নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরকীয়াসহ আমার স্ত্রীর অনেক সমস্যা পাশাপাশি আমার কর্মচারী রকি মন্ডলেরও। তাই আমি কারো বিরুদ্ধে কিছুই বলবো না। স্ত্রীর কথায় আটকে রেখে মারধর করা আমার ভুল হয়েছে।
জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, গৃহবধূর অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করায় অভিযুক্ত রকি মন্ডলকে রবিবার সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে অপরাধ করলেও কাউকে আটকের সঙ্গে সঙ্গে আইনের কাছে সোপর্দ করতে হবে। একইদিন বিকেলে এ ঘটনায় আরেকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম বলেন, এক গৃহবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্ষণের আসামিকে জোরপূর্বক আটক রেখে নির্যাতনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা থেকে আগত সাভার পৌরসভা এলাকার স্বঘোষিত এই পাতি নেতা দীর্ঘদিন ধরে সাভার পৌরসভার শাহীবাগ ও মজিদপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিনি কিছুদিন আগে স্থানীয় সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সাভার প্রেসক্লাবে ঢুকে সিনিয়র সাংবাদিকদের লাঞ্ছিতসহ হামলা ও ভাঙচুর চালায়, একাধিক সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীকে হত্যা চেষ্টা চালায়, প্রকাশ্যে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করে, অন্যের ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে। এছাড়াও চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল এই কথিত পাতি নেতা। তার বিরুদ্ধে মোট ৬ টি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক জিডি ও অভিযোগ রয়েছে। চাঁদার দাবিতে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সাভার মডেল থানা পুলিশের তৎপরতায় গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে মুক্ত হয়ে আবারো বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছেন কথিত এই পাতি নেতা।