নয়া কণ্ঠ অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক সময়ের বিবৃতিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজকে পত্রিকায় দেখতে পেলাম অ্যামনেস্টি ইান্টারন্যাশনাল বিবৃতি দিয়েছে-আমাদের দেশে যারা র্যাবে কাজ করবেন কিংবা যদি কেউ মানবাধিকার লংঘনের সাথে যুক্ত থাকেন তাদেরকে যেন স্ক্রিনিং করা হয় এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেয়া হয়। আমরা অ্যামনেস্টিকে চিনি, এমনেস্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন তারেক রহমানের বেয়াইন আইরিন খান । এখনো তিনি অ্যামনেস্টির সাথে যুক্ত আছেন। তিনি তারেক রহমানের স্ত্রীর চাচাতো বোন। যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার শুরু হলো তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল । ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যখন বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসংযোগ, বাসে আগুন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিল তখন সেটার বিরুদ্ধে তাদের কোনো বিবৃতি ছিলোনা।’
তিনি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এগুলোর বিবৃতি কিভাবে কাদের বিরুদ্ধে হয়, কোথায় ড্রাফট হয় আর কিসের বিনিময়ে এদের বিবৃতি আসে সেটা আমাদের জানা আছে। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছিল ঠিক সেই সময়ও তাদের বিবৃতি ছিল যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার পক্ষে, কিন্তু ফিলিস্তিনে পাখির মতো যেভাবে মানুষ মারা হয় তখন ইসরাইলের বিপক্ষে তাদের কোনো বিবৃতি দেখি না। আমাদের এসব বিষয় নিয়ে বিবৃতি দেয়ার নৈতিক কোনো অধিকার আছে বলে মনে করি না।’
এ দুটি সংগঠন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়েছে উল্লেখ করে ড.হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘তাদের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যাতে দেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র না করতে পারে। এসব বিবৃতির কোনো মূল্য নাই সুতরাং এগুলোতে বিভ্রান্ত হবার কোনো প্রয়োজন নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন বঙ্গবন্ধু ও আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণের পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আজকে আবার দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অপশক্তি এক হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাই সতর্ক থাকুন।’
তিনি আরও বলেন, সেই কারণে আজকে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। সেই লবিস্টের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কয়েকটা বিবৃতি আর কিছু কিছু কংগ্রেসম্যান কিংবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বারের চিঠি ক্রয় করা হয়।
আগামী নির্বাচন দেশ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার এ কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগামী নির্বাচন হচ্ছে দেশের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। দেশ কি পাকিস্তান হবে না কি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অভিযাত্রায় আরো দ্রুত বেগে এগিয়ে চলবে, সেটির ফয়সালা হবার নির্বাচন এটি। দেশে কোনো তাঁবেদারি সরকার, যারা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিবে তারা বসবে, না কি স্বাধীনচেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার থাকবে সেটি ফয়সালা হবার নির্বাচন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ এ নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ নির্বাচন হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূমি রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা হবে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে, নাকি সমুদ্রের একটা অংশ কেউ নিয়ে যাবে, আমাদের কোনো দ্বীপ অন্য কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই নির্বাচনে ফয়সালা হবে দেশে কি ‘হামিদ কারজাই’ মার্কা তাঁবেদারি সরকার হবে, নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।’
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আত্মতুষ্ঠিতে না ভোগার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সুতরাং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। দল আজকে সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়। সাড়ে ১৪ বছর আগের চিত্র আর আজকের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরুন, সেই উন্নয়নের চিত্রগুলোই ফেসবুকসহ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। শুধু নিজের ছবি ফেসবুকে দেয়া কর্মী, উদ্ধৃত আচরণের কর্মী আমাদের প্রয়োজন নাই, তারা দলের জন্য বোঝা, তাদের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না।
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মঈনুদ্দীন, এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সসম্পাদক খাদিজাতুল আনোয়ার সনি প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম।