দেশে সারের ঘাটতি না থাকলেও কৃষক পর্যায়ে চলছে হাহাকার। কুষ্টিয়াসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নন-ইউরিয়া এমওপি সার (মিউরেট অব পটাশ) যেন কৃষকদের কাছে সোনার হরিণ। টাকা দিয়েও ডিলারদের দোকানে মিলছে না সার। গ্রামাঞ্চলের কিছু দোকানে সার মিললেও ৬৫০ টাকার প্রতি বস্তা এমওপি সার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা। শুধু এমওপি সার নয়, সব ধরনের সারে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, সার পরিবহণ ঠিকাদারের একটি চক্রের অপতৎপরতায় সার নিয়ে এমন নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে।
বিএডিসি বলছে, বিপুল পরিমাণ নন-ইউরিয়া সার আমদানি করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। এরমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ এমওপি সার রয়েছে। এসব সার জেলাভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ডিলারদের নামেও বরাদ্দ হয়েছে এমওপি সার। কিন্তু আঞ্চলিক গুদামে ঢুকছে না সার। আর গুদামে সার না থাকায় ডিলারদের মাঝে সার সরবরাহ করতে পারছে না বিএডিসি। ডিলাররা জানান, এর ফলে কৃষকরা সঠিক সময়ে সার পাচ্ছেন না। পেলেও কিনতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ভর্তুকির সার নয়ছয় হওয়ায় সরকারও পড়ছে ক্ষতির মুখে। তাদের দাবি, কোনো ছোট ডিলার যদি দাম বাড়ায়, তাহলে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সারের দাম বাড়ত। কিন্তু সারা দেশেই যেহেতু সারের দাম বেড়েছে, সেহেতু বলা যায়
দাম বৃদ্ধির পেছনে রাঘববোয়ালদের হাত রয়েছে। সার পরিবহণ ঘিরে গড়ে উঠা ওই চক্রটি নানা কৌশলে এমওপি সার আঞ্চলিক গুদামে সরবরাহ করছেন না। সরবরাহ বিলম্বিত করে দেশে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাড়তি দামে বিক্রির পরিবেশ তৈরি করেছেন। ডিলাররা আরও জানান, পরিবহণ সিন্ডিকেটের কারণে তাদের ভুগতে হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তি সার পরিবহণ করে থাকেন। আবার এরা সারের বড় আমদানিকারক। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক সার গুদাম থেকে কুষ্টিয়া ছাড়াও মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় সার সরবরাহ করা হয়। সরেজমিন এই আঞ্চলিক গুদামে গিয়ে ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুন ও জুলাই মাসের এমওপি সার এখনো অনেক ডিলার পায়নি। আগস্ট মাসের সার আরও ১০ দিন আগে বরাদ্দ হলেও কোনো ডিলার সার পাচ্ছেন না। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ডিলার কাশেম আলী বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করি। প্রতিদিন কৃষকরা এসে দোকানে ঝামেলা করছে। বিএডিসির গুদামে এলে তারা সার দিতে পারছেন না। এক মাস আগে পে-অর্ডার জমা দিলেও এখনো সার পায়নি। অথচ কৃষকরা মনে করছেন আমরা সার বেশি দামে বাইরে বিক্রি করে দিয়েছি। যশোর বিএডিসির (সার) যুগ্ম পরিচালক রোকনুজ্জামান বলেন, গুদামে সঠিক সময়ে এমওপি সার আসছে না। তাই ডিলারদের মাঝে সময়মতো সার সরবরাহ করতে সমস্যা হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বিলম্ব হলেও সিরিয়াল অনুযায়ী ডিলারদের মাঝে সার সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
খুলনা বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, সার পরিবহণ নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ বলেন, সারা দেশে সারের কোনো সংকট নেই। তবে কেন গুদামে সার যাচ্ছে না, এসব বিষয় আমার জানা নেই। অফিসে এলে জেনে বলতে পারব।