
জেলা প্রতিনিধি, ভোলাঃ
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোরঞ্জন বর্মনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ফোন কল না ধরা, সংবাদ সংক্রান্ত তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকা এবং সন্ধ্যার পরে সরকারি মুঠোফোন বন্ধ করে রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বলছেন— তথ্যের জন্য একাধিক বার ইউএনওর মুঠোফোন কল, ক্ষুধে বার্তায় এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। শুধু সাংবাদিক নন, প্রশাসনিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ নাগরিকরাও ইউএনও’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে এসে ব্যর্থ হয়ে হতাশ ফিড়তে হচ্ছে বাড়ি। ফলে জরুরি প্রশাসনিক তথ্য, মন্তব্য বা ব্যাখ্যা না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনগণের সেবামূলক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ভোলা জেলা শাখার দায়িত্বশীল সদস্যবৃন্দরা অভিযোগ করে বলেন— ইউএনও মনোরঞ্জন বর্মন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংবাদ প্রস্তুতের স্বার্থে প্রশাসনের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। এমনকি সরাসরি উপজেলা পরিষদে গেলেও তাকে সচরাচর পাওয়া যায় না।
গণমাধ্যমকর্মী পরাণ আহসান, আব্দুর রহমান (ইমন) তানজিল হোসেনসহ আর-ও অনেকে জানান, “প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে জনগণকে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেন না, বার্তায় সাড়া দেন না। এতে তথ্যের স্বচ্ছতা বিঘ্নিত হচ্ছে, আর সংবাদকর্মীদের বারবার বিপাকে পড়তে হচ্ছে।” তারা আর-ও বলেন, “একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের জন্য তার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বারবার কল দিয়েছি, বার্তা পাঠিয়েছি— কিন্তু সাড়া নেই। প্রশাসনের বক্তব্য ছাড়া সংবাদ অসম্পূর্ণ থাকে— এই দিকটিও তিনি বিবেচনায় নিচ্ছেন না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোরহানউদ্দিনের এক তরুন রিপোর্টার জানান, “ঢাকায় সচিবদের ফোনে পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের বোরহানউদ্দিন উপজেলার ইউএনওকে পাওয়া যায় না। অনেকেই নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবেন— এ জায়গাটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
ভোলার সিনিয়র সাংবাদিকদের জোড়ালো দাবি: বিষয়টি দীর্ঘদিনের আরেক সিনিয়র সাংবাদিক বলেন,
“জেলার সব সাংবাদিকই জানে—ইউএনও ফোনে সাড়া দেন না। সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ডিসিকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেন তিনি ফোন ধরেন না, সেটি আজও রহস্য।”
স্থানীয় সাংবাদিকরা মনে করছেন— প্রশাসন ও গণমাধ্যম পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাগুলো তুলে ধরে। কিন্তু তথ্য না পাওয়ার প্রবণতা স্বচ্ছ প্রশাসনের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
শুধু সাংবাদিকই নন— উপজেলার সাধারণ মানুষও অভিযোগ করেন, ইউএনও’র সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব। অনেকে বলেন— অফিসে গেলেও তাকে বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না। ফলে নামজারি, ভিজিএফ– ভিজিডি, জমি– জমার বিরোধ, বিভিন্ন সরকারি সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিয়মিত।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন— একটি জেলের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে তার উন্মুক্ত ও মিডিয়া–বান্ধব আচরণ কাম্য।
মিডিয়া–প্রশাসন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা:
বিশ্লেষকদের মতে— একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাংবাদিকদের সুসম্পর্ক না থাকলে— প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসে না, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছায় না, স্থানীয় সমস্যা তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে, প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে,
জনগণের শেষ ভরসাস্থল হিসেবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব— “তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার” নিশ্চিত করা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যাহত হলে তা জনস্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যায়।
ফোন না ধরা এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে গত বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর দুপুরে ইউএনও মনোরঞ্জন বর্মনের সরকারি মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুধে বার্তা পাঠানো হলেও স্পষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসক হিসেবে মনোরঞ্জন বর্মন ও জেলা প্রশাসকের ভূমিকা আরও সক্রিয় হওয়া জরুরি বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। জনগণের সমস্যা সমাধানে ও উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রশাসন– গণমাধ্যমকর্মীদেরকে সহযোগিতা অপরিহার্য— এমন মতই সুশীল সমাজের।