শরীয়তপুরে বৃক্ষমেলা-২০২৩ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কয়েকজন শিল্পীকে জুতা পেটা
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের ডুবিসায়বর এলাকায় একটি মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পীদের জুতাপেটা করে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত শনিবার রাতের ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর ওই মেলা বন্ধ করে দিয়েছেন আয়োজকেরা।
ডুবিসায়বর এলাকার বাসিন্দারা জানান, সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ডুবিসায়বর গ্রামের একটি আবাসিক এলাকায় একটি বৃক্ষমেলা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাদশা ফকির, দেলোয়ার হোসেন ও জাজিরা উপজেলা শিল্পকলার কি-বোর্ড প্রশিক্ষক ইমরান আহম্মেদ। ইউএনও কামরুল হাসান মেলা আয়োজনের মৌখিক অনুমতি দেন। ১৩ সেপ্টেম্বর মেলা শুরু হয়। মেলায় গাছ বিক্রির একটি স্টলের পাশাপাশি খাবার, তৈজসপত্র, প্রসাধনসামগ্রী, খেলনার অন্তত ২০টি স্টল বসানো হয়। সন্ধ্যার পর মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
মেলা শুরুর পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন আহম্মেদ মারা যান। তখন দুই দিন মেলা বন্ধ রেখে আবার মেলার কার্যক্রম চালানো হয়। মেলাটি যে জায়গায় হচ্ছিল, তার পাশে যুবলীগের ডুবিসায়বর শাখা কমিটির সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন মাদবরের বাড়ি। গত মঙ্গলবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। এমন পরিস্থিতিতে মেলাটি চলছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে কৌতুক ও নৃত্যশিল্পীদের একটি দল আনা হয়। সন্ধ্যার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলে মারা যাওয়া যুবলীগ নেতার স্বজনেরা আয়োজকদের অনুষ্ঠান বন্ধ করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁদের অনুরোধ উপেক্ষা করে মঞ্চে অনুষ্ঠান চালানো হচ্ছিল। রাত ৯টার দিকে মাইনুদ্দিন মাদবরের বড় ভাই সুলতান মাদবর মঞ্চে উঠে শিল্পীদের জুতাপেটা করতে থাকেন। তখন মঞ্চে ও গ্রিনরুমে থাকা শিল্পীরা দৌড়ে পালিয়ে যান। শিল্পীদের জুতাপেটার দৃশ্যের ১৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে সুলতান মাদবর গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাই মারা গেছেন। পুরো গ্রাম শোকাহত। মেলা কমিটিকে বলেছিলাম, গানবাজনা বন্ধ রাখতে। কিন্তু তারা কোনো কথা শোনেনি। তখন রাগে-দুঃখে মঞ্চে উঠে শিল্পীদের পিটিয়েছি। রাগের মাথায় কাজটি করা ঠিক হয়নি।
মেলার আয়োজক দলের সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইউএনও মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে মাঠে মেলা বসানো হয়। চেয়ারম্যানের মৃত্যুর কারণে কয়েক দিন মেলা বন্ধ রেখেছিলাম। অনেক টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। কৌতুকশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের আনা হয়। হঠাৎ করে সুলতান মাদবর নামের এক ব্যক্তি মঞ্চে উঠে শিল্পীদের জুতাপেটা করেন। এরপর আমরা মেলা বন্ধ করে দিয়েছি।’
মুক্তাগাছা থেকে আসা শিল্পীদের একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঞ্চে উঠে আমাদের জুতাপেটা করবেন, এটা ভাবনার বাইরে ছিল। তিন নারী সদস্যসহ আমাদের অন্তত আটজনকে পেটানো হয়েছে। ঘটনাটিতে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকা ত্যাগ করি।
একজন কৌতুক অভিনেতা গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও যুবলীগের নেতা মারা যাওয়ার খবর তাঁরা জানতেন না। আয়োজকেরা বিষয়টি তাঁদের জানাননি। যিনি শিল্পীদের মারধর করেছেন, তিনি শান্তভাবে বললে তাঁরা অনুষ্ঠান বন্ধ করে চলে আসতেন।
জানতে চাইলে ইউএনও কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বৃক্ষমেলার কথা বলায় তিনি মৌখিকভাবে অনুমতি দেন। চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর মেলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপরও মেলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। শিল্পীদের লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।