আবারও খুলনাবাসী বেছে নিলেন তালুকদার খালেককেই নতুনমুখ পেল বরিশালবাসী
নয়া কণ্ঠ ডেস্ক
তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনেও পূর্বের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেককেই নির্বাচিত করেছেন খুলনাবাসী। অপরদিকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ সেরনিয়াবাতকে নতুন নগরপিতা হিসাবে বেছে নিয়েছেন বরিশালবাসী।
তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দুই সিটির নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে। পাশাপাশি সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচনও বয়কট করেছে দলটি।
যদিও দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এদিকে খুলনা সিটিতে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। রাতে খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন শিল্পকলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।ঘোষিত ফল অনুযায়ী, আব্দুল খালেক ১লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল হাতপাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট।
এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তালুকদার আব্দুল খালেক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নৌকা প্রতীক), মো. আ. আউয়াল (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হাত পাখা), মো. শফিকুল ইসলাম মধু (জাতীয় পাটি, লাঙ্গল), এস এম শফিকুর রহমান (স্বতন্ত্র, টেবিল ঘড়ি) এবং এস এম সাব্বির হোসেন (জাকের পার্টি, গোলাপ ফুল)।
এ ছাড়া ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
পৌরসভা থেকে ১৯৯০ সালে খুলনাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির শেখ তৈয়বুর রহমান, ২০০২ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক, ২০১৩ সালে বিএনপির মো. মনিরুজ্জমান মনি এবং ২০১৮ সালে ফের তালুকদার আব্দুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হন।
এদিকে চতুর্থ নগরপিতা হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে বেছে নিয়েছেন বরিশাল সিটির বাসিন্দারা। ভোট শেষে সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বরিশালের নতুন মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।
বরিশালে এবার মেয়র পদে লড়েছেন ৭ জন। আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (নৌকা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম (হাতপাখা), জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস (লাঙ্গল), জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান (ঘড়ি, বিএনপি), আসাদুজ্জামান (হাতি) ও আলী হোসেন (হরিণ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ছাড়া সিটির ৩০টি ওয়ার্ডে ১১৮ জন সাধারণ এবং ৪২ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী লড়েছেন। নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেন।
পৌরসভা থেকে ২০০২ সালের ২৫ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২৫ বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে এখন এর আয়তন ৫৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বরিশাল সিটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। সিটির প্রথম নগরপিতা হিসেবে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরণ জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৩ সালে বিএনপির আহসান হাবিব কামাল এবং ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হন।
বরিশালে সিটি নির্বাচন চলাকালে দুপুরের দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর নৌকার সমর্থকরা হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। এ সময় তার কর্মী-সমর্থকদেরও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম দাবি করেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।