গোয়ালন্দে প্রতারক আটক
পরিচয় দিতেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, বিদেশ পাঠাতে নিতেন টাকা, অতঃপর
মো. সাজ্জাদ হোসেন
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে ‘ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি’ খুলে বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেস করে বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দিয়ে হতিয়ে নিতেন টাকা। বিদেশগামীদের প্রলোভন দেখাতেন সরকারিভাবে ঋণ পাইয়ে দেয়ারও আশ্বাস দিতেন। অবশেষে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে এ প্রতারক।
সাংবাদিকদের কাছে তথ্য আসে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেস করে বিদেশে পাঠানোর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে ও বিদেশগামীদের সরকারিভাবে ঋণ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা হতিয়ে নিচ্ছেন রিয়াদ খান (৪৮) নামে এক প্রতারক। তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের মনি মন্ডল গ্রামের গোলাম নবী হোসেন খানের ছেলে।
এ তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১ টার দিকে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গোয়ালন্দ পৌরসভার উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হানিফ আলী বিশ্বাসের বাড়িতে যান প্রতিবেদকসহ পাঁচ সাংবাদিক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাড়া বাড়ির একটি রুম নিয়ে খোলা হয়েছে ‘এরাবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া এন্ড জব প্রসেসিং’ নামে ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি। মহাসড়কের পাশেই বড় করে প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা আছে, ‘বিদেশগামী যাত্রীদের ভিসার উপর লোন প্রসেসিং করাসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রসেসিং করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানটি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দ্বারা পরিচালিত।’
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, একটি কক্ষে বিদেশগামী পাঁচ যুবকের সঙ্গে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে কথা বলছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক রিয়াদ খান। সাংবাদিকদের কাছেও নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য পরিচয় দেন তিনি। তবে প্রথমে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত দুজন উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানান। এসময় প্রতিষ্ঠানের বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বৈধ সব কাগজপত্রই তার আছে। তবে এই মুহুর্তে অফিসে নেই, পরে দেখাতে পারবেন। তার সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট কথা বলার পর তিনি সেনাবাহিনীতে কোন পদে চাকরি করতেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তা তিনি সঠিকভাবে বলতে পারছিলেন না।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি নিজেকে প্রতারক বলে স্বীকার করেন।
প্রতারণার উদ্দেশ্যে তিন মাস আগে তিনি ওই বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি’ খুলে বসেন বলেও স্বীকার করেন।
পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে খবর দেয়া হলে রিয়াদ খানকে আটক করে যৌথ বাহিনী।
এসময় তার অফিসে আসা ভুক্তভোগীরা বলেন, একজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমি রিয়াদ খানের অফিসে কয়েকদিন আগে এসে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে ভিসা সহ মেডিকেল করে দুবাই পাঠানোর কথা বলেন। পরে তিনি ১৫ হাজার টাকা তাকে দেন।
গোয়ালন্দঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়াদ খান তার প্রতারণার কথা স্বীকার করেছেন। কাউকে বিদেশে পাঠানোর তার কোন বৈধতা নেই। তিনি বিদেশে পাঠানোর কথা বলে দেড় শতাধিক বিদেশগামীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।