নগর ভবনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীদের থাকা- খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন মেয়র লিটন : মিনু
রাজশাহী ব্যুরো ঃ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু অভিযোগ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মদদে নগর ভবনে সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছিল। আর এ কারণেই নগর ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মিনু বলেন, নগর ভবনে যা হয়েছে, তা মেয়র লিটনের জন্যই হয়েছে। নগর ভবনের আটতলায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন মেয়র লিটন। গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ের পর সেখান থেকে অনেক দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করেছে ছাত্র-জনতা। শনিবার (১৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকার নিজ বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা যদি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের সঙ্গে যুক্ত হয় তাদেরকেও আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে যারা দখলদারিত্ব করেছে তাদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। এতে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কোথাও কারও সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে তারা সবাই সেনাবাহিনী, পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিএনপির কেন্দ্র বরাবর দরখাস্ত দিয়ে এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। এগুলো দল প্রশ্রয় দেয় না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে মিনু বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। কারণ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তাকে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই তিনি বীরের বেশে দেশে ফিরবেন। দেশবাসী তার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর শুধু তাই নয়, পলাতক নেত্রী শেখ হাসিনাকেও দেশে ফিরতে হবে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিশ্ব আদালতে তার বিচার করা হবে।
এসময় আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মদদে নগর ভবনে সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থার করা হয়েছিল বলে বিএনপি নেতা মিনু বলেন । আর এ কারণেই নগর ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিনু বলেন, নগর ভবনে যা হয়েছে যিনি বর্তমান মেয়র তার জন্যই হয়েছে। যখন আমি মেয়র নির্বাচিত হই তখন আমি সবার মেয়র, বিএনপির নই। যখন রাজপথে নামি তখন আমি বিএনপির নেতা। নগর ভবনের আট তলায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন মেয়র লিটন। গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ের পর সেখান থেকে অনেক অস্ত্রও উদ্ধার করেছে ছাত্র-জনতা।
মিনু আরো বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করায় এধরনের ঘটনা ঘটেছে। মেয়র লিটন সিটি কর্পোরেশনেকে সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। অস্ত্রধারীরা সিটি কর্পোরেশনের গেস্ট হাউজে ছিলো।
রাজশাহীর ব্রিটিশ কাউন্সিল দখলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, প্রায় ১৫০ বছরের পুরাতন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভূমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। তবে এ প্রতিষ্ঠান আমরা ধ্বংস করতে দেব না, জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব। কোনো অপশক্তিকে এটা দখল করতে দেওয়া হবে না। দ্রুতই যেন সংস্কার করে এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের এমন দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তির কথা আগামী দিনে কেউ চিন্তা করলে ছাত্র-জনতা তাদের রুখে দেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মিনু। তিনি বলেন, আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তারপরে আমাদের দল ও ব্যক্তি। কোনো ব্যক্তির কারণে দলে ক্ষতি হলে সেটা দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই ঝরে পড়বে। আর যারা প্রকৃত ভালো নেতা; সেটা যে দলেরই হোক তারা অবশ্যই হাইলাইট হবে। নতুন প্রজন্ম একটা ভালো রাজনৈতিক লিডারশিপে আসছে। এটা আমাদের ও জাতির জন্য দরকার।
দেশের সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলন প্রশ্নে মিনু বলেন, আমাদের প্রায় ১১শ’র মতো নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় আটক হয়েছেন। মারা গেছেন চারজন। আর আহত হয়েছেন অসংখ্য। প্রচুর নেতাকর্মী পঙ্গুও হয়েছেন। নিহতদের পরিবারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার ফান্ড থেকে প্রতিবছর আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে রাজশাহী জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ওয়াসিম হোসেন।