রংপুরে প্রশাসনের জব্দকৃত সরঞ্জাম দিয়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব
এনামুল হক স্বাধীন, রংপুর ব্যুরো
অভিযানের ৪০ দিনেও অপসারণ হয়নি মালামাল
প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
রংপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দকরা ভেকু মেশিন দিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলন করছে আসামিরা। অভিযোগ উঠেছে কাগজ কলমে আসামিদের জেল জরিমানা করলেও জব্দ করা মালামাল রক্ষাকবজ করতে পারেনি তাজহাট থানা পুলিশ। ফলে জিম্মায় থাকা জব্দকৃত ভেকু ও শ্যালো মেশিন দিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলন করছে বালু কারবারিরা। ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর ৩১ নং ওয়ার্ডের মাঝামাঝি ধর্মদাস লক্ষনপাড়া এলাকায়। পুলিশ প্রশাসনের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের জনমনে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত পুলিশ প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ওই এলাকায় অবৈধভাবে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করে আসছে ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল,আলম,আসিফ,জাহাঙ্গীর,রতনসহ একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
এসব বালু উত্তোলন কেন্দ্র বন্ধে গত ২২ শে এপ্রিল অভিযান পরিচালনা করে রংপুর জেলা প্রশাসক কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই এলাকায় উজ্জ্বল, আলম ও আসিফ গংদের অবৈধ বালুমহলে অভিযানের সময় একটি এস’কে ভেটর (ভেকু গাড়ি) ৫টি শ্যালো মেশিন, ১ হাজার ফিট পাইপ, ২০টি ড্রাম ও ১লাখ ৪০ হাজার ঘনফুট বালু জব্দসহ উজ্জ্বল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেট শেখ তাকী তাজওয়ার।
এসব জব্দকৃত মালামাল ওই এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে লিয়ন ইসলাম ও আফজাল হোসেনের ছেলে রেদওয়ান মাহমুদসহ আরো কয়েকজন সাক্ষীর সামনে তাৎক্ষণিক ভাবে ৩২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহাদৎ হোসেন ও তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা পুলিশের জিম্মায় রেখে দেয়া হয়। তবে এ বিষয়ে ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহাদৎ হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, আমি প্রশাসনের ওই জব্দকৃত মালামাল জিম্মায় নিতে চায়নি, এবং ওই অবৈধ বালুমহলগুলো আমার ৩২ নং ওয়ার্ডের ভিতরে নয়। ওই এলাকা পড়েছে ৩১নং ওয়ার্ডের ভিতরে। আমি কিভাবে জিম্মায় নিতে পারি, জিম্মায় যদি দিতেই হয় ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অথবা তাজহাট থানা পুলিশকে দেন। উনারা আমার কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো ফোর্স করে জোর পূর্বক আমার জিম্মায় দেয়।
তিনি আরো বলেন,আমি পরবর্তীতে মহামান্য আদালতের নোটিশ ও নির্দেশনা মোতাবেক ঘটনার পরের দিন সকালেই তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আমার জিম্মায় থাকা জব্দকৃত মালামাল বুঝিয়ে দেই।
ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন সাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলামের ছেলে লিয়ন ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, পুলিশ প্রশাসন ইচ্ছা করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বালু মহল উচ্ছেদ করতে পারে। কিন্তু তাদের এ বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা নেই, আমার জমি নষ্ট হচ্ছে, এলাকার কৃষিজমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন এগুলো দেখছে না। আমাদের এই কষ্ট দূর করার মত কেউ নেই। দিনের পর দিন এভাবেই নানামুখী সমস্যার মধ্যে দিনাতিপাত করছি আমরা আর বালু কারবারি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বালুমহলে অভিযানে জব্দকৃত মালামাল জিম্মি রাখতে কাউন্সিলরসহ জোরপূর্বক সাক্ষর নেয়া হয়েছে৷ আবার সেই মালামাল দিয়ে কীভাবে বালু উত্তোলনের কাজ হয়। এছাড়াও স্থানীয় কৃষক পরিবারের সদস্য শাহাজাদী বেগম, শফিকুল আলম,জুলেখা ,ফাতেমাসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অনেকে বলেন,তাজহাট থানা পুলিশ প্রশাসন জব্দকৃত ভেকু মেশিনসহ অন্যান্য মালামাল ঘটনাস্থল থেকে অপসারণ না করে উল্টো বালু উত্তোলনকারী আসামিদের সাথে আঁতাত করে পুনরায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এই দুঃসাহসের খুঁটির জোর কোথায়। এই বালু উত্তোলনের
ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের এলাকাবাসীর। এবিষয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল প্রতিবেদককে বলেন,
ঘাঘট নদ পরিচালনায় নেয়া হয় না সঠিক শাসন ব্যবস্থা। সেই সুযোগে বালু কারবারিরা দৈনন্দিন প্রকাশ্যে অবাধে তুলছে কোটি কোটি টাকার বালু। সাথে বিলীন করছে কয়েক হাজার হেক্টর কৃষিজমি। ফলে প্রতি মৌসুমে কৃষক হারাচ্ছে ব্যাপক ফসল। ক্রমান্বয়ে ঘাটতি হচ্ছে খাদ্য শস্য। শুধু তাই নয়,পরিবেশ দূষণেও ক্ষতির বাহিরে নেই জনস্বাস্থ্য। এছাড়াও রাস্তা-ঘাট নষ্ট করে বেপরোয়া গতি নিয়ে চলা ঝুঁকিপূর্ণ বালু বহনকারী ট্রলির চাপায় ঘটছে রক্তপাত। এতে মুমুর্ষ আহতসহ হচ্ছে অনেকেরই প্রাণহানি।
এতো কিছুর পরেও নেয়া হয়না নদ নদী শাসন ব্যবস্থা। তিনি আরো বলেন,
যদিও এইসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করলেও দু-একদিন মেশিনারীজ সরঞ্জাম এদিক-সেদিকে রেখে পুনরায় বালু উত্তোলন শুরু করে দেয় কারবারিরা। এটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জব্দকৃত মালামাল দিয়ে
বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে ওখানে এদের খুঁটির জোর কোথায়।
এইসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এঘটনার বিষয়ে তাজহাট মেট্রোপলিটন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, আমার জিম্মায় যে সকল মালামাল সংরক্ষণের জন্য দেয়া হয় ,সেগুলো থানায় রাখা আছে।
আর বাকি মালামাল রয়েছে কাউন্সিলর শাহাদৎ হোসেনের জিম্মায়।এখন সেই মালামাল দিয়ে যদি পুনরায় বালু উত্তোলন হয় ,সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
এবিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান বলেন,
আমরা অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে যথেষ্ট সোচ্চার, যেখানে অভিযোগ পাই সেখানেই অভিযান চালাই। তবে জব্দকৃত মালামাল দিয়ে পুনরায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা নেই, তার পরেও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছি।