সরকারের নির্ধারিত মূল্য কাগজে আছে বাজারে নাই!
______________রাজশাহী ব্যুরো
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক রমজান মাসে পণ্যমূল্য কমাতে সবজি, মাছ-মাংস ও মুদিখানা পণ্যসহ মোট ২৯ পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। শনিবার (১৬ মার্চ) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু তদারকির অভাবে তা অকার্যকর। পরিস্থিতি এমন-সরকারের এই নির্দেশ এক প্রকার কাগজে-কলমে। ফলে মূল্য নির্ধারণ করার পরও ক্রেতার কোনো লাভ হয়নি। বরং অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়তি দরেই পণ্য বিক্রি করছে। ফলে হতাশ সাধারণ ক্রেতা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ এর ৪ (ঝ) ধারার ক্ষমতা বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। আর বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে কাজ করবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তবে বাজারে চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
শনিবার থেকে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ভোক্তা পর্যায়ে ১৭৫ ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকায় বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০-২০০ টাকা। পাশাপাশি প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। প্রতিকেজি মুগডাল ১৬৫ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ১৭০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ছোলার দাম ৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়।
পাশাপাশি প্রতিকেজি মসুর ডালের দাম খুচরা পর্যায়ে ১৩০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করলেও বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। মোটা দানার মশুর ডালের কেজি ১০৫ টাকা ৫০ পয়সায় নির্ধারণ করলেও খুচরা বাজারে ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম সর্বোচ্চ ৬৬৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০০ ও সোনালি ৩০০ টাকা।
রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০, কাতল ৩০০, মৃগেল ২৮০। এছাড়া গরিবের পাংগাস মাছও বিক্রি হচ্ছে নিম্ন ২০০ টাকা কেজি দরে।
তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া পেঁয়াজের বাজারে প্রতি কেজি মুল্য কমেছে ১৫-২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৫ টাকা, কিন্তু সোমবার ১৮ মার্চ সাহেব বাজার মাস্টার পাড়ায় ক্রেতারা কিনছেন ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে। প্রতিকেজি রসুন ১২০ টাকা ও আদা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা। তবে বাজারে এই দামে পণ্য দুটি মিলছে না। বিক্রি হয়েছে ১০০-২০০ এবং ১৬০-২০০ টাকা। কাঁচা মরিচ ৬০ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। খেজুর ১৮৫ টাকার বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
সাহেব বাজার মাস্টার পাড়ায় পণ্য কিনতে আসা রেজাউল করিম তপন বলেন, শুধু পত্রিকা ও টেলিভিশনে সরকার পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে কখনও মিল পাওয়া যায়নি। মনে হয় সরকারের সংস্থাগুলো পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু বাজারে তদারকি করে না। সেক্ষেত্রে ভোক্তার কোনো লাভ হয় না। সব লোক দেখানো।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: শামসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মুল্য নির্ধারণের দিন থেকে দুইদিন সরকারি ছুটি। এছাড়া আমাদের জনবল কম থাকার কারণেও সম্পুর্ণ রুপে তদারকি করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে জেলা প্রশাসক ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রনে আমরা যৌথ অভিযান করব। আশা করা যায় অল্প সময়ের মধ্যে দাম সহনীয় হবে। বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী জেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো: মাসুদ আলী গণমাধ্যমকে জানান , বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ২৯টি পণ্যের দাম নিয়ে আমরা গত রোববার থেকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজার তদারকি করছি। এই পণ্য বাজারে নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটা দেখা হচ্ছে। এছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকদের সাথেও কথা হয়েছে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হবে