ব্যাঙের ছাতার মত রাজশাহী জেলার তানোরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ।
________রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় তানোর গোল্লাপাড়া বাজারে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় , তানোর উপজেলা সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন, ও গোল্লাপাড়া বাজার এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে চটকদার নামের ভুঁই ফোড় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে উঠা এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে মাঝে মধ্যেই ভুল চিকিৎসাই রোগী মারা যাবার ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নীতিমালা লঙ্ঘন করে যত্রতত্র গড়ে ওঠা বেসর কারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেই নিজস্ব কোনো চিকিৎসক। অথচ প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একাধিক চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দক্ষ টেকনিশিয়ানদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্যাথলজির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রতিবেদন কর্মচারীরা দিয়ে থাকেন । এমনকি মালিক ও কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে চিকিৎসা দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিবন্ধিত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫টি । তালিকার বাইরে একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। অথচ সরকারি নিয়মানুসারে ১০ শয্যার একটি বেসরকারি ক্লিনিকের জন্য সার্বক্ষণিক একজন এমবিবিএস চিকিৎসক ও একজন প্রশিক্ষিত সেবিকা থাকার বিধান রয়েছে। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরকার অনুমোদিত ও প্রশিক্ষিত টেকনিশিয়ান থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে উপজেলা হাসপাতালের গেটের সামনে ‘প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ দেদারসে চালাচ্ছে অবৈধভাবে ডায়াগনস্টিকের ব্যাবসা । সেখানে দক্ষ টেক নিশিয়ানদের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে প্যাথলজির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতি বেদন দেন সেখানকার মালিক ও কর্মচারীরা বলে স্থানীয়রা জানান।
সম্প্রতি তানোর পৌর এলাকায় গোল্লাপাড়া বাজারে ‘তানোর জেনারেল হাসপাতাল’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তবে, এই হাসপাতালের সাইনবোর্ডের নিচে সরকার অনু মোদিত বেসরকারি হাসপাতাল বলা হলেও নিবন্ধন নম্বর দেয়া হয়নি। এসব ক্লিনিক, ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ডিএমএফ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো চলছে। যে কারণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নেই কোনো নজরদারি। তারা সব সময় প্রভাবিত হন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক ও ম্যানেজার দ্বারা। ফলে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকেরা স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। অনিয়ম ও অপচিকিৎসার কারণে মাঝেমধ্যে ঘটছে রোগী মৃত্যুর ঘটনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান , তাৎক্ষণিক সেবা নিতে এসে রোগীরা বেশির ভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। তারা ভালো মানের চিকিৎসকের মাধ্যমে সেবা দেয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা ডাক্তার সেজে রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপত্র দেন। এমনকি রোগীদের সিজারিয়ানসহ নানা ধরনের অপারেশন করে থাকেন । আর প্রশিক্ষিত সেবিকার কাজ করানো হয় আয়া ও পিয়ন দিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় নি । ক্লিনিকের সামনে একাধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নাম ব্যবহার করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে । যার বেশির ভাগ ভুয়া চিকিৎসক। অথবা যার নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করছে, হয়তো ওই চিকিৎসকেরা জানেন না বা বিষয়টি তাদের নজরে নাই ।
বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মহোদয়ের নির্দেশের আলোকে গত ১৮ জানুয়ারি রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা: আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান, রাজশাহী জেলায় যে সকল অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সেগুলো অনতিবিলম্বে তদন্ত পূর্বক দায়ী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ?