পাখির অভয়ারণ্য বেতকা-রাখালগাছি চরাঞ্চল
মো. সাজ্জাদ হোসেন গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকৃতির অপার সম্ভানাময় দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পথে-ঘাটে, দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠে যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য চোখে পড়ে। তেমনি বেতকা ও রাখালগাছির সৌন্দর্য দেখার মতো। হাজার হাজার পাখির বসবাস সেখানে। দলবেঁধে বসে আছে নদীর পাড়ে আবার কখনো যন্ত্রচালিত ট্রলারের শব্দে উড়ে যাচ্ছে আকাশ পানে। এককথায় বলা যায় পাখির মুক্ত বিচরণের নিরাপদ স্থানও বেতকা ও রাখালগাছি।
সরেজমিনে গিয়ে দলবদ্ধ পাখির কিচিরমিচির শব্দ, নদীর মাজ বরাবর পানকৌড়ির ডুবোডুবির দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দলবেঁধে পাখিগুলো এক স্থান থেকে আরেক স্থানে মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই মুক্ত আকাশে বিচরণ করছে তারা।
কথা হয় ২১ নং বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবিরের সাথে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ নদীর সাথে যুদ্ধ করে তাদের জীবন অতিবাহিত করে। ঠিক তেমনি দীর্ঘ যুগের পর যুগ নদীর সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছে একটি জনগোষ্ঠী। আর এরা হচ্ছে বেতকা ও রাখালগাছি বসবাসরত জনগোষ্ঠী। তবে পাখিদের অভয়ারণ্য চোখে পড়ার মতো গ্রাম বেতকা-রাখালগাছি। নদীর কুল ঘেষে বিচরণ করছে কয়েক প্রজাতির পাখি। নদীর দু-কুল জুড়েই চোখে পড়ে বিভিন্ন প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, ডাহুক ও বন পাতিহাস। এ যেনো পাখির স্বর্গরাজ্য।
বলছিলাম রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড বেতকা-রাখালগাছি গ্রামের কথা। গ্রাম দুটি চারপাশে নদীর মধ্যে যেনো জেগে উঠা একটি দ্বীপ। সেখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ ও মৎস্য শিকার। নদীর বুকে মাছ ধরেই অনেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এলাকাটি বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বর্ষাকালে চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। তাদের কৃষি পণ্য বহন ও যাতায়াতের বাহন নৌকা ও ঘোড়ার গাড়ি। সেখানকার মানুষের শহরে যাতায়াতের রয়েছে ধরাবাধা নিয়মকানুন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের নদী পথে চলাচল করতে হয়। তবে গো-খাদ্য ও পাখির অভয়ারণ্যের উৎকৃষ্ট স্থানও বলা হয়ে থাকে বেতকা-রাখালগাছি চরাঞ্চলকে।
বেতকা ও রাখালগাছি চরের বাসিন্দা আক্কাছ কাজী, জসিম উদ্দিন মন্ডল, মো. কাশেম মন্ডল, আলম মৃধা, মোহন প্রামানিক বলেন, এহন নদীতে তেমন পানি নাই। তই পাখির আনাগোনা আছে মেলা। এহানে পাখিরা মনের আনন্দে ভয়-ডর ছাড়া ঘুরে বেড়ায়। এহন আর কয়ডা পঙ্খী আছে! ঠান্ডার দিন আইলে মেলা কুটুম পাখি মানে (অতিথি পাখি) আসে এহানে। ঠান্ডার দিন মেলা পাখি দেখা যায় এই নদীর বুকে। সত্যি কথা বলতে কি পাখিদের পাশাপাশি গরু, ঘোড়া, মহিষ ও ছাগলের খাওনের অভাব নাই আমাদের চরে। পাখিরা মনের আনন্দে নদীর এপাড় থেকে ওই পাড়ে ঘুরে বেড়ায়। ঠান্ডার দিন পাখির মেলা বসে আমাদের গাঙ্গে। তারা আরও বলেন, আমাদের এহানে পাখিদের উড়াউড়িতে কোনো বাধা নেই। কেউ পাখি ধরেও না আবার তাড়িয়েও দেয় না।
কাতার প্রবাসী কেএম সোহেল মাহমুদ বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর দেশের বাইরে থাকার পর শেখরের সন্ধানে বাপ-দাদার জন্মস্থান বেতকা-রাখালগাছি গিয়েছিলাম। শহরের কোলাহল থেকে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছা ছিলো অনেক দিনের। এবার দেশে আসার পরে গোয়ালন্দ উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল বেতকা-রাখালগাছি যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে না গেলে বুঝতামি না গ্রামের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক দৃশ্য এতো মনোরম। রাজবাড়ী জেলার অনেকেই সেন্টমার্টিন যান সাগরে পাখিদের বিচরণ দেখতে। বেতকা-রাখালগাছি না গেলে বুঝতেই পারবেন না সেখানে শতশত পাখির অবাধ বিচরণ। সেন্টমার্টিনের চেয়ে কোনো অংশে কমতি নেই এখানে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ, পানকৌড়ির ডুবোডুবির দৃশ্য আর লম্বা লম্বা গলা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে সাদা বকের মাছ শিকারের দৃশ্য। এযেনো পাখপাখালির স্বর্গরাজ্য। সবচেয়ে বেশি ভালোলাগার বিষয় হচ্ছে সেখানে পাখিদের মুক্ত বিচরণে কোনো প্রকার বাধা বিপত্তি নেই। মনের আনন্দেই পাখিগুলো উড়ে বেড়ায় সেখানে।