
শ্রীপুরে প্রায় দেড় যুগ পর নিজেদের উপর হওয়া নির্যাতনের বিচার চায় বাবু শেখ
মুজাহিদ শেখ, শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
আমাকে উলঙ্গ করে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও গ্রামের রাস্তা দিয়ে ঘোরানো পর চিকিৎসা করতে না দেওয়ার বিচার চাই।
কান্না কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ৩০ বছর আগে ভারত থেকে বিনিময় করে বাংলাদেশে এসে মাগুরা জেলা শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামের বাসিন্দা আজিম উদ্দিন শেখ এর ছেলে বাবু শেখ (৪০)।
তিনি জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে তার বাবা ও চাচাদের সাথে পার্শ্ববর্তী ভারত দেশ থেকে বিনিময় করে বাংলাদেশে আসেন।
এরপর তারা শ্রীপুর উপজেলার ৭ নং শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন।
কিন্তু পুরো হিন্দু গ্রামের মধ্যে ভারত থেকে বিনিময় করে আসা কিছু মুসলমানকে মেনে নিতে না পেরে ২০০৯ সাল পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালান সেই গ্রামের হিন্দু নেতা তৎকালীন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি অনিল ঘোষ, রুপ কুমার, বিষ্ণু, বিন্দুসহ বেশ কিছু হিন্দু নেতা ও আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতারা।
বাবু শেখ বলেন, ২০০৯ সালের পরে উপজেলা নির্বাচনে তিনিসহ ভারত থেকে বিনিময় করে বাংলাদেশে এসে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের নাগরিত্ব পাওয়া সকল মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোট গুলো তৎকালীন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বদরুল আলম হিরোকে দেন।
সে নির্বাচনে বদরুল আলম হিরো কে ভোট দেওয়াটাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই ক্ষোভে বাবু শেখের ঘরে রাতের অন্ধকারে লুটপাট চালিয়ে ও আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে পরের দিন সকালে সেখানে চাষাবাদ করে কচু ও কলা গাছ রোপন করেন।
পরবর্তীতে সেখান থেকে বাবু শেখকে ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে গ্রামের রাস্তার দিয়ে হাঁটিয়ে এক গাছের সাথে বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চাঁলান বলে অভিযোগ করেন তিনি
বাবু শেখ, আরো বলেন, ঐদিন আমাদের সকল মুসলমান সম্প্রদায়ের উপরে অমানুষিক নির্যাতন এবং বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা।
পরবর্তীতে আমরা আইনের আশ্রয় নিলে আওয়ামী লীগের নেতাদের কথামতো প্রশাসন আমাদের কোন সঠিক বিচার দেয়নি। আমরা এখন ওই দিনের ঘটনার পুনঃ তদন্ত ও আমাকে যারা উলঙ্গ করে নির্যাতন করেছে ও আমার বসত ঘর পুড়িয়ে দিয়ে ক্ষতি সাধন করেছে আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।
এ ছাড়াও একই গ্রামের জালাল শেখ জানান,
ওই দিনের ঘটনায় এই গ্রামের হিন্দু নেতারা ও আওয়ামী লীগের নেতারা শুধু বাবুল শেখ ই না আমরা যে কয় ঘর মুসলমান ভারত থেকে বিনিময় করে এসেছি এই দুর্বৃত্তরা তাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই ভাঙচুর চালায় ও লুটপাট করে। এমন কি আমাকে মারধরের সময় আমার মেয়ে এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করতে আসলে তার সাথে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটান হিন্দু নেতা সানা ঘোষের ছেলে নমনী ঘোষ।
জালাল শেখ বলেন, ঐ দিনের ঘটনার সাথে জারিয়া গ্রামের প্রায় সকল হিন্দু ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও জড়িত ছিল। আমরা সেই ঘটনার সুস্থ তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই।
আরো খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জারিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রমথ নাথ ঘোষ, সুনীল ঘোষ ও গিরিশ চন্দ্র ঘোষের সাথে বিনিময় করে এসেছে জালাল শেখ,আছু শেখসহ ৬ ভাই।
এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে বিনিময় করেছে এসেছে বাছেদ শেখ, ও প্রমথ নাথ ঘোষ ও রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সাথে বিনিময় করে এসেছে আজিল মন্ডল, বাবু মন্ডল ও নাসির মন্ডলসহ ৫ ভাই। পরবর্তীতে তাদের জামাই আত্মীয়রা এখানে এসে বসবাস শুরু করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অনিল ঘোষ বলেন, ওই সময়টা তো আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার একটি ধর্মীয় কীর্তনের দল ছিল। আমি সেই কীর্তনের দলটি নিয়ে ঢাকার সাভারে ছিলাম। পরবর্তীতে বাড়িতে এসে শুনে আমার গ্রামে এমন একটা নেক্কার জন্য ঘটনা ঘটেছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে তৎকালীন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কানুপ্রিয় ঘোষ বলেন, ওই দিন আমি মাগুরাতে ছিলাম। বাড়িতে এসে জানতে পারি একটা জমিকে কেন্দ্র করে বাবু শেখকে গ্রামের কিছু লোক উলঙ্গ করে মারধর ও নির্যাতন চালিয়েছে।