ডিবি বগুড়া ও গাবতলী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে ডাকাত দলের ৭ সদস্য গ্রেফতার
বিশেষ প্রতিনিধি:
ডিবি বগুড়া ও গাবতলী থানার যৌথ অভিযানে গাবতলী থানা এলাকায় একরাতে একাধিক বাড়িতে ক্লু-লেস দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের ৭ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র পাইপগান, কার্তুজ, চাপাতি, ছোরা, গ্রিল কাটারসহ লুষ্ঠিত মালামাল উদ্ধার।
বাদী মোঃ নাজু মিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন যে, গত ১ জুলাই রাত আনুমানিক ৩ টায় তার বাবা তার ঘরের দরজার সামনে এসে তার নাম ধরে ডেকে দরজা খুলতে বললে বাদী ঘরের দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দেওয়া মাত্র তার বাবার সাথে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে (চাকু, দা, হাসুয়া, পেরেক তোলার কামরি) সজ্জিত অজ্ঞাতনামা ৯ থেকে ১০ জন ব্যক্তিকে দেখতে পায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।
২ জন ব্যক্তি তাদের নিকট থাকা চাকু বাদীর গলায় ধরে এবং বলে, তাদের কাছে যা আছে তাহাদের দিয়ে দিতে, নইলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলিবে, আর কেউ কোন চিৎকার যেন না করে।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা বাদী ও তার বাবকে ঘরে থাকা ওড়না দিয়ে বেধে তার স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে রেখে তার রুমে থাকা ষ্টীলের বাক্স খুলে তার ভিতরে থাকা ৬ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন, ৪ আনা ওজনের ওজনের স্বর্ণের ১ জোড়া কানের দুল, এবং নগদ ২,৫০০/-টাকা, ১টি বাটন মোবাইল ফোন ও বাদীর স্ত্রীর নাক থেকে স্বর্ণের নাক ফুল খুলে নিয়ে রুমের দরজা বাহির থেকে আটকিয়ে চলে যায়।
একই রাতে আনুমানিক সাড়ে ৩ টায় বাদীর ভাতিজা মোঃ সাদিক (১৯) ও ভাবি মোছাঃ সালেহা বেগম (৪০) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ীর বাহিরে আসলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা চলে যাওয়ার সময় তাদের দেখতে পেয়ে আটকিয়ে গলায় চাকু ধরে জিম্মি করে তাদের বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে শয়ন ঘরে নিয়ে যায়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের ঘরে থাকা ওড়না দিয়ে তাদের হাত পিছনে বেঁধে বসিয়ে রাখে।
যেহেতু বাদীর ভাবী ও তাদের বাড়ী পাশাপাশি তাই বাদী নিজ ঘর থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের কথা বার্তা শুনতে পায়।
অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ভাবীর ঘরে থাকা ষ্টীলের বাক্স খুলে তার ভিতরে থাকা ৪ আনা ওজনের স্বর্ণের ১ জোড়া কানের দুল, ও ছাগল বিক্রির নগদ ১৬ হাজার টাকা, ১টি স্মার্ট ফোন, ১টি বাটন মোবাইল ফোন ও তার ভাবীর নাক থেকে স্বর্ণের নাক ফুল খুলে নিয়ে বাসা থেকে চলে যায়।
তার বাবা জানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার বাবার ঘরে ঢুকে বাবাকে জিম্মি করে চাকুর ভয় দেখিয়ে কৌশলে তাকে ডাকার কথা বললে বাবা ভয়ে তার নাম ধরে ডাকে। উল্লেখ থাকে যে, তার বাবা বয়স্ক হওয়ায় তার শয়ন ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাতো।
বাদীর অনেক কষ্টে ঘরের দরজা খুলে তার ভাবীর বাসায় গিয়ে তার ভাবীর মুখে তাদের বাড়ীতে ঘটে যাওয়া উল্লেখিত ঘটনার বিবরণ জানতে পারে।
ততক্ষণে প্রায় ভোর হয়ে গেছে। আশেপাশের লোকজন আসিলে বাদী ও তার ভাবী তাদের ঘটনার বিস্তারিত বলে।
তখন আরো জানতে পারে তাদের বাড়ীতে আসার পূর্বে একই তারিখ রাত আনুমানিক ২ টা ৩০ মিনিটে তার প্রতিবেশী মোঃ আব্দুল বাছেদ এর হাঁসের খামারে হাঁস পাহাড়া দেওয়া ঘরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা গিয়ে একই কৌশলে তাকে সহ তার স্ত্রীকে খুন জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের নিকট থেকে ৩ আনা ওজনের স্বর্ণের ১ জোড়া কানের রিং, ১টি স্বর্ণের নাক ফুল, ১টি বাটন মোবাইল ফোন এবং নগদ ১,২০০/-টাকা নিয়ে গিয়াছে।
আরো জানতে পারেন যে, তাদের বাড়ী থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী গ্রামস্থ জনৈক মোস্তাফিজার রহমান এর দোকানঘরে একই তারিখ রাত আনুমানিক ১ টায় স্কুটি নেওয়ার কথা বলে কৌশলে ডাকিয়া ঘরে প্রবেশের চেষ্টা করেছে এবং ব্যর্থ হবার পর্যায়ে উক্ত ব্যক্তির চোখে আঘাত করেছে।
তিনি আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার পরও রুমের গ্রিলের দরজা লাগিয়ে দিতে সক্ষম হওয়ায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা কোন কিছু নিতে ব্যর্থ হইয়া চলে যায়। এ সংক্রান্তে গাবতলী থানায় মামলা নং-০২, তারিখ-০১/০৭/২০২৪ খ্রি., ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজু হয়।
গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউপির অর্ন্তগত নশিপুর সোনারপাড়া প্রফেসর মার্কেটের সামনে হতে তদন্তেপ্রাপ্ত আসামী মোঃ শাহ আলমকে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরবর্তীতে ধৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে অত্র মামলার মূল রহস্য উদঘাটন পূর্বক তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক গত রবিবার ৭ জুলাই গাবতলী উপজেলার ছোট ইটালী এলাকা থেকে ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তদন্তেপ্রাপ্ত আসামী মোঃ রাব্বি হাসানকে নিজ বসত বাড়ি হতে গ্রেফতার করা হয়।
ধৃত আসামীর দেহ তল্লাশিকালে তার নিকট হতে লুন্ঠিত নগদ ২,০০০ হাজার টাকা ও ১টি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক তার নিজ শয়ন কক্ষের খাটের নিচ হইতে অত্র ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ১ টি ছোরা এবং ১ টি গ্রিল কাটার উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে ধৃত আসামী রাব্বিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্য মোতাবেক শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর এলাকাস্থ তদন্তেপ্রাপ্ত ধৃত আসামী মোঃ মাসুদ রানা এর ভাড়া বাসা হতে আসামী মোঃ মাসুদ রানা সহ আসামী শ্রী সনাতন সরকার ও আসামী আঃ হামিদ গনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকালে আসামী মাসুদের নিকট হতে লুন্ঠিত ১,৭০০/-টাকা, আসামী শাহ আলমের নিকট হতে লুন্ঠিত ১,৩০০/- টাকা, আসামী সনাতনের নিকট হতে লুন্ঠিত ১,০০০/- টাকা এবং আসামী আঃ হামিদের নিকট হতে লুন্ঠিত ১,০০০/-টাকা উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য মোতাবেক অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত মূলহোতা মোঃ আলম মিয়া ওরফে আদম আলীকে ৮ জুলাই রাত্রী ২ টা ৪৫ মিনিটে শেরপুর উপজেলার আড়ংশাইল সাকিনস্থ আড়ংশাইল প্রাইমারি স্কুলের সামনে মির্জাপুর হইতে তাড়াশগামী পাকা রাস্তার উপর হতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর দেহ তল্লাশীকালে তার তার ডান হাতে ধরে রাখা সাদা বাজার করা প্লাষ্টিকের ব্যাগের মধ্যে সাদা পলিথিন দ্বারা মোড়ানো অবস্থায় একটি দেশীয় অস্ত্র পাইপগান দুইটি কার্তুজ উদ্ধারসহ লুন্ঠিত নগদ ৩,০০০/-টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন মোঃ আলম মিয়া ওরফে আদম আলী (৪০), পিতা-মৃত সেকেন্দার আলী, জৈন্তিপুর, থানা-তাড়াশ, জেলা-সিরাজগঞ্জ। মোঃ রাব্বি হাসান (২২), পিতা-মোঃ লুৎফর রহমান প্রাং, গ্রাম-ছোট ইটালী,গাবতলী।
মোঃ মাসুদ রানা (৩০), পিতা-মোঃ আঃ সালাম, গ্রাম-রাজাপুর, শেরপুর। মোঃ শাহ আলম (৩২), পিতা-ফজলু প্রাং, নিজগ্রাম, গাবতলী। মোঃ আবু সাঈদ (২৬), পিতা-ছাকা উদ্দিন, গ্রাম-মদনপুর পশ্চিমপাড়া, শেরপুল। শ্রী সনাতন সরকার (৪০), পিতা-মৃত শ্রীবেন্দ্র সরকার, গ্রাম-সাগরপুর, থানা-শেরপুর। আঃ হামিদ (৪০), পিতা-মৃত মকবুল সরকার, গ্রাম ধাওয়াপাড়া, থানা-শেরপুর-বগুড়া।
উদ্ধারকৃত মালামালের বর্ণনাঃ একটি সচল দেশীয় অস্ত্র পাইপগান, ২ রাউন্ড কার্তুজ, ২টি চাপাতি, ১টি ছুরি, ১টি ছোরা, ১টি গ্রিল কাটার। গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা জানায় যে, তাহারা দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘবদ্ধভাবে অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া বিভিন্ন রোড়ে, দোকানপাটে, বাড়িঘরে ডাকাতি করিয়া আসিতেছিল।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই রাত্রে গ্রেফতারকৃত আসামিগণ সহ অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে গাবতলী উপজেলা মাজবাড়ি (কোনাবাড়ি) এলাকায় হাজির হয়ে এজাহারে উল্লেখিত বাড়িগুলোতে ঢুকে দেশীয় অস্ত্র,ধারালো চাপাতি, ছুরি, ছোরা প্রদর্শন করিয়া তাদেরকে কক্ষের ভিতর নিয়া হাত পা বাধিয়া রেখে এজাহারে উল্লেখিত মালামাল লুট করে নিয়ে সেখান হতে পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনায়, ধৃত আসামী আদম আলীর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ডাকাতি, চুরি, অস্ত্র, মাদকসহ ৮টি, আসামী রাব্বি এর বিরুদ্ধে চুরি ১ টি, আসামী শাহ আলম এর বিরুদ্ধে ডাকাতি ১ টি এবং আসামী আবু সাঈদ এর বিরুদ্ধে মাদক ১ টি মামলা রহিয়াছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রত্যেকের ০৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
উক্ত ঘটনার সহিত জড়িত পলাতক অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান চলমান থাকবে।