রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু এবং তার স্ত্রী নাজমা আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
______________রাজশাহী ব্যুরো
রবিবার দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। রাসিকের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহু ও তার স্ত্রী নাজমা আলী মহানগরের শাহ মখদুম থানার উত্তর নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
দুজনের সম্পদের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জনের সূত্রও মেলে কমিশন কর্মকর্তাদের। এরই ধারাবাহিকতায় স্ত্রীসহ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাদি হয়ে মামলা দুটি করেন দুদক রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম।
এলাকায় দুজনের নামে বেশ কয়েকটি বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে। সম্পদের দিক থেকে সিটির অন্যান্য সব কাউন্সিলদের মধ্যে শাহুই সবচেয়ে বেশি ধনী।
সোমবার (১ জানুয়ারি) এসব তথ্যসহ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাজশাহীর দুদক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার তথ্যমতে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়ে রাসিক’র ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহু ও তার স্ত্রী নাজমা আলীর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। একপর্যায়ে দুজনকে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কাউন্সিলর শাহু তার নামে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৪ টাকার এবং নাজমা তার নামে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭৬ টাকার সম্পদ দেখান।
কিন্তু অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পায়, কাউন্সিলর শাহুর নামে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার ৫০৪ ও নাজমার নামে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আছে।
কাউন্সিলর শাহু ২ কোটি ২৪ লাখ ৬২ হাজার ও নাজমা ৩৯ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯ টাকার সম্পদের তথ্য দুদকের কাছে গোপন করেছেন। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক আরও জানায়, মোট সম্পদের মধ্যে কাউন্সিলর শাহুর ৭ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৫০৩ টাকার সম্পদই তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। আর তার স্ত্রীর আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ আছে ১ কোটি ৬ লাখ ৬ হাজার ৯২৬ টাকার। অর্থাৎ মোট সম্পদের বড় অংশই তারা অবৈধ পন্থায় অর্জন করেছেন। এতে তারা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুটি মামলাতেই দুজনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং দুদকের কাছে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, শাহাদাত আলী শাহু নিজ এলাকায় জমি কেনাবেচার ব্যবসা করে বিপুল অর্থ, বাড়ি, গাড়ি ও বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। গত বছর সিটি নির্বাচনে হলফনামায়ও তিনি বিপুল সম্পদের বর্ণনা করেছেন। কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নিজ এলাকা ও আশপাশের এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে মানুষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় শাহু বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১৪ টাকা। ব্যাংকে জমা দেখানো হয়েছে ৩ কোটি টাকা। নগদ টাকা দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৭ হাজার ৫১২ টাকা। স্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৭ লাখ ৫০ হাজার ৪৮৫ টাকা। স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়া তার সম্পদের মধ্যে একটি প্রাডো জিপ, একটি পিস্তল, ২১ বিঘা জমি, আটটি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে নিজের নামে পাঁচটি, স্ত্রীর নামে রয়েছে তিনটি বাড়ি
শাহুর নামে পাঁচটি বাড়ির মধ্যে রয়েছে একটি তিনতলা বাড়ি, পাঁচতলা একটি বাণিজ্যিক ভবন, একটি তিনতলা আবাসিক, একটি পাঁচতলা আবাসিক ও দুইতলা আবাসিক বাড়ি। স্ত্রীর নামে তিনটির একটি ছয়তলা আবাসিক, নির্মাণাধীন পাঁচতলা ও ১০ তলা বাড়ি।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট কাউন্সিলর শাহাদত আলী শাহুর অবৈধ সম্পদের খোঁজে অভিযানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মহানগরের নওদাপাড়া আম চত্বর এলাকায় শাহুর কার্যালয় ও বাড়িতে অভিযান চালান সংস্থাটির কর্মকর্তারা।