৪ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় ঝিনাইগাতী।
মোঃআমিনুল ইসলাম শেরপুর প্রতিনিধি
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে প্রথম শক্রমুক্ত হয় ঝিনাইগাতী। পরে মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা।
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে প্রথম শক্রমুক্ত হয় ঝিনাইগাতী। পরে মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা।
জানা যায়, ২৫ শে মার্চের কালরাতেই ভোর ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণার টেলিগ্রাম বার্তা ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছায়। টেলিগ্রাম পেয়ে ওয়্যারলেস মাস্টার জামান সাহেব তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় খবর পাঠান।
পরদিন ২৬ শে মার্চ সকালে আওয়ামী লীগ নেতা ডা. সৈয়দ হোসেন, ফকির আব্দুল মান্নান মাস্টার, সেকান্দর আলীসহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌছান। টেলিগ্রামটি তারা তখনই শেরপুর সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের কাছে পাঠান। ওয়্যারলেসে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদের নেতারা হাতে পেয়েই তা শেরপুর নিউমার্কেট মোড়ে এক সমাবেশে পাঠ করে শোনান। বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে পুরো শেরপুর শহর মুখরিত হয়ে ওঠে।
২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. সৈয়দ হোসেন ও তৎকালীন ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নান মাস্টারকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ই.পি.আর ক্যাম্পে যান। ক্যাম্পটির সুবেদার হাকিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। এ সময় তারা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধের পরিকল্পনা গ্রহণ নেন। যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবকসহ মুজিববাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে পিছু হটে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।
২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত ছিল। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী গোলা বর্ষণ করতে করতে পৌঁছায় ঝিনাইগাতী বাজারে। পাকিস্তানি বাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। ২৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে মুক্তাঞ্চলে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তাওয়াকুচা যুদ্ধে ৪ পাকিস্তানি সেনা ও ৭ রাজাকার নিহত হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে। ৩ আগস্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা। ওই দিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ও নিখোঁজ হন। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ৩৫ সেনা নিহত হয়।
২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেল সহ ৮ রাজাকারকে ধরে নিয়ে যান। ২৮ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঝিনাইগাতীতে ৮ জনকে আহম্মদ নগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
৩ ডিসেম্বর রাত দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাকিস্তানি বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম খবর পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদ নগর হেড কোয়ার্টারের সৈনিকদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতেই বিনা যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় ঝিনাইগাতী । ৪ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ান।