জম্বি ড্রাগ তথা ট্রাঙ্ক নামক মাদক হতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার সতর্কবার্তা
________ রাজশাহী ব্যুরো
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর,বিভাগীয় কার্যালয়, রাজশাহী কর্তৃক ‘জম্বি ড্রাগ ‘ নামক এক ভয়ঙ্কর মাদকের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে । এই মাদক ব্যাবহারে মাংসপেশির পচন সৃষ্টিকারী ‘ জম্বি ড্রাগ ‘ আমেরিকায় ট্রাংক উপনামে পরিচিত । এই মাদকটি মানবদেহে মারাত্মক ইনফেকশন ,দৃষ্টিভ্রম এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে । ট্রাংক অল্প পরিমাণে সেবন করলে সেবনকারী কিছু সময়ের জন্য বাস্তব ভুলে চলে যান অন্য কোনো জগতে , বিচরণ করেন তার কল্পনায় । কিছু সামান্য বেশি সেবনে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে পড়ে । ট্রাংক বা জম্বি ড্রাগ মূলত জায়লজিন নামে পরিচিত একটি ড্রাগ যা পশুদের বিশেষ করে ঘোড়ার চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহূত হয় । এটি ফেন্টানিল, হিরোইন, কোকেন ছাড়াও আরো কিছু মাদকের সাথে মেশানো হয় সেগুলোর প্রভাব ও স্থায়িত্বকে বাড়ানোর জন্য । জম্বি ড্রাগ তথা ট্রাংক এর ধ্বংসাত্মক দিক হলো এটি ত্বক, পেশী, রক্তনালী এবং শরীরের প্রধান প্রধান অঙ্গগুলোর মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে । ট্রাংক সেবনকারীদের শরীরে নিরাময় অযোগ্য ক্ষত সৃষ্টি হয় যা ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়ে গাংগারিন হয়ে যায় । কিছু কিছু ট্রাংক সেবনকারীদের মনোবৈকল্য দেখা যায় । তারা কেউ আগ্রাসী আচরণ করে আবার কারো মতিভ্রম হতে পারে । ট্রাংক মানুষের স্নায়ুর এমনভাবে ক্ষতি করে যা হৃদস্পন্দন এবং শাসপ্রশ্বাসকে কমিয়ে দিতে পারে যার ফলে সেবনকারীদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে । ট্রাংকের চিকিৎসা দূরহ হতে পারে কারণ অতিরিক্ত সেবনে উত্তেজনা প্রশমনে যে নারকান’ ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয় তাও ট্রাংকের চিকিৎসায় কাজ করে না ।
একটি মারাত্মক বিষয়ের আশঙ্কা হলো অনেক সেবনকারীরা নিজেরাও জানেনা যে, তারা ট্রাংক সেবন করছে কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এটি সেবনকারীর অজান্তে অন্যান্য মাদকের সাথে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে । ট্রাঙ্ক মানবদেহে ব্যাবহারের জন্য অনুমোদিত নয় , এটি বড় পশু যেমন ঘোড়ার চেতনানাশক কাজে ব্যবহূত হয় । সিডিসির তথ্যমতে ট্রাঙ্ক এর মাত্রাতিরিক্ত সেবনের কারণে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে মৃত্যুহার ৩৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে । এই মাদকে মাত্রাতিরিক্ত সেবনে প্রতি ৫ মিনিটে একজন মৃত্যুবরণ করছে । অনেকক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এই ট্রাঙ্ক এর সাথে পরিচিত নন আবার ট্রাঙ্ক এর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম চিকিৎসকদের কাছে নাই । ট্রাংক ব্যাবসায়ীরা এতটাই হিংস্র যে তারা যে কোনো উপায়ে এই মাদক ব্যাবসা চালিয়ে যেতে চাই ।
আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসীর একটি দেশ । ফলে এই ভয়ঙ্কর মাদকটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র , বাংলাদেশ এর ব্যাতিক্রম নয় । আমেরিকায় প্রায় আড়াই লাখের বেশি বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী বংশোভূত অভিবাসী রয়েছে । এ বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর যাতায়াত ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ – আমেরিকার অর্থনৈতিক যোগাযোগ ভালো । তাই ট্রাংক নামিয়ে মাদকটি বাংলাদেশে সহজেই প্রবেশ করতে পারে । সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে জম্বি ড্রাগ তথা ট্রাঙ্ক নামক নতুন মাদকটির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে । ট্রাঙ্ক এর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এর ভয়াবহতাকে প্রতিহত করার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণকে তৎপর হতে হবে । যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস না হয়ে যায় সে বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।