মোস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় মাস্টার্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট নিয়ে মেধাবী ছাত্রী সারমিন শোভা একটা চাকুরীর আশায় যখন ব্যার্থ । তখন নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য হাটি হাটি পা পা করে শাশুড়ি ও স্বামীর দেওয়া ৪০০০/ টাকা নিয়ে বুটিকস এর ব্যাবসায় নেমে পরেন । প্রায় চার বছর ধরে নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে স্বামীর অনুপ্রেরণায় ব্যাবসায়ী জগতে নিজের পরিচিতি এনেছেন ।ই কমার্স,, এফ কমার্স সেক্টরকে কাজে লাগিয়ে এখন নিজে একজন অনলাইন সফল উদ্যোক্তা/ সেলার উদ্যোক্তা।আসুন সারমিন শোভার মুখ থেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফলতার কথা শুনি।
আগ্রহ যতোটা প্রবল ছিলো বাস্তব ভাবে দেখতে গেলে আমার কাছে ততোটা সহজ ছিলো না।অনেক কষ্ট, পরিশ্রম করেছি লাগামহীন পাগলের মতো ছুটেছি সে জন্য আজকে আমার এই অবস্থান।আমি বিশ্বাস করি আমি পরিশ্রম করতে পারি । পরিশ্রম করি সে জন্য এখন ও আমি টিকে আছি আলহামদুলিল্লাহ।আমি আমার সকল কাজ নিজ হাতে একাই করে থাকি।মাত্র ৪০০০ টাকা দিয়ে আমি শুরু করেছিলাম আমার এই ব্যবসা।
তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি এগিয়েছি হয়তো আমার বেশি সময় লেগেছে কারন আমি একাই চলতাম আমার কাজ একাই করতে হতো। পন্যের সোর্স থেকে শুরু করে কাস্টমার ফিডব্যাক পাওয়া পর্যন্ত যতো কাজ থাকে সব আমি নিজে একাই করে থাকি ।তবে হ্যাঁ অনেকেই ভাবে ১ দিনেই সব সফলতার আসছে তা কিন্তু নয় এটার পিছনে অগাধ পরিশ্রম করেছি আমি।প্রথমত আমি আমার উদ্যোগের সোর্স খুঁজতে শুরু করি। যা নিয়ে কাজ করবো সেই সম্পর্কে তথ্য রুট লেভেল থেকে সংগ্রহ করেছি সেই সম্পর্কে জেনেছি। চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে বগুড়ার দূরত্ব খুব একটা বেশি না হওয়ায় সেখান থেকে শাল ক্রয় করে আনতাম। ব্যাবসায় সফলতার মুখ দেখতে পেলেও ফিনান্সিয়াল প্রতিবন্ধকতা থাকায় নিজেকে সেভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি ।কাজটাকে ভালোবেসে করেছি সে জন্য আমি মেয়ে হয়েও ২০১৯ সাল থেকে মহিলাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের তৈরি পণ্য ক্রয়ের জন্য তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করি । তারপর অনলাইনে ব্যাবসার পরিচিতি প্রকাশ করি ।আমার অনলাইন পণ্যের মধ্যে বগুড়ার বিভিন্ন ধরনের শাল,ব্লক প্রিন্ট হ্যান্ড প্রিন্ট এর বিভিন্ন রং,তুলি,ক্যামিকাল,কাঠের ডাইস অন্যতম । যা ব্যাপক জনপ্রিয়তায় স্থান পায় ।কারন একটাই আমি আমার পন্যের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা যাচাই বাছাই করেই সেটা নিয়ে কাজ করি।কাস্টমার কোন কিছু জানতে চাইলে আমি সঠিক তথ্য গুলো দিতে পারি কাস্টমারের সাথে কমিটমেন্ট বজায় রাখার চেষ্টা করি।আলহামদুলিল্লাহ আমার উদ্যোগ Shovas Mini zone পেজটা ৪ বছর ধরে টিকে আছে শুধু মাত্র কমিটমেন্ট ঠিক রাখার জন্য।
আমি একটা কথাই বলবো ব্যবসাটা হালাল ভাবে করতে চাইলে , সেটা নিয়ে কাজ করতে চাইলে বিক্রি করাটাই আসল লক্ষ্য মনে না করে , কাস্টমার পজিটিভ ফিডব্যাক ও রিপিট কাস্টমার তৈরি করার চেষ্টা থাকতে হবে তবেই অনলাইন অফলাইনে টিকে থাকা সম্ভব।এই সেক্টরে আছি ৪ বছর চলছে অনেক কিছু শেখার আছে জানার আছে।
আমার স্বপ্ন গুলো আরো অনেক বড় । আমার চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার ব্লক প্রিন্ট ও হ্যান্ড প্রিন্টের ব্যাবসা সারা দেশে বিস্তার লাভ করুক এটাই আমার কাম্য ।আমি বেকার না লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে হালাল পথে আয় করছি। চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি বিজনেস করে বেকারত্বের মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহায় পেয়েছি।
লোকে কি বলবে এইটা মাথায় না এনে লক্ষ্য করবেন , লোকে আসলে কিছুই ভাবে না এতো টাইম নাই লোকের আমাকে নিয়ে ভাবার। আমরা নিজেরাই মন গড়া কল্পনায় ভাবনা তৈরি করি।ইচ্ছে থাকলে অল্প টাকা দিয়েও ব্যবসা করা যায় শুধু সময়, পরিশ্রম আর ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হয় তবেই সফলতা আসে। আমার যে ধরনের ব্যাবসায়িক চিন্তা চেতনা একমাত্র অল্প পুঁজির প্রতিবন্ধকতা আমাকে পিছিয়ে দিয়েছে । আমার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ চাঁপাই নবাবগঞ্জের বড় বড় সেক্টর থেকে আমাকে বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে । তাছাড়া আমার প্রতি দেশের ক্রেতা সাধারণের দোয়া রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি ।