প্রকৃত মুমিন প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ পারে কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাতের আমল পরিত্যাগ করতে পারে না- ছারছীনার পীর ছাহেব
প্রায় দেড় শতাধিক বছর ধরে ছারছীনা সিলসিলার খেদমত এই উপমহাদেশে অব্যাহত রয়েছে
-তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
ছারছীনা দরবার শরীফের মরহুম পীর ছাহেব কেবলাদের ঈছালে ছাওয়াব ও ছারছীনা মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলের আখেরী মুনাজাতের পূর্ব আলোচনায় গতকাল বাদ জুময়া ছারছীনা দরবার শরীফের গদ্দিনসীন পীর ছাহেব কেবলা মুফতী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন (মা. জি. আ.) একথা বলেন।
হযরত পীর ছাহেব কেবলা বলেন- পবিত্র মাহে রমজানে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য ও জাহান্নামের শান্তি হতে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলে কাঁদতে হবে। বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে। পবিত্র রমজানের পবিত্রতা ঘরে ও বাইরে উভয় জায়গায় রক্ষা করতে হবে। বর্তমানে দিন যত যাচ্ছে মানুষ ততই নেক আমল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একদন লোক ঈমানদার ব্যক্তিগণকে নেক আমল এর পথ হতে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তারা নিত্য নতুন নতুন ফন্দি এঁটে মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করছে। তারা নাপিতের মত আমলকে নিয়েও কাঁটছাঁট করছে। আবার একদল হক্কানী আওলিয়ায়ে কেরামদের সম্পর্কেও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, মূলত তারা ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন।
পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন- মনে রাখতে হবে এ দরবার সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি আমলী দরবার। সূচনালগ্ন থেকে এ দরবার সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে । প্রকৃত মুমিন প্রয়োজনে তার জীবন উৎসর্গ পারে কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নাতের আমল পরিত্যাগ করতে পারে না।
পীর-ভাইদের উদ্দেশ্যে হযরত পীর ছাহেব কেবলা বলেন- এ দুনিয়ায় কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কাজেই যখনই নেক আমলের সুযোগ পাওয়া যাবে তখনই তা অর্জন করতে হবে। মনে রাখতে হবে লকব লাগালেই পীর হওয়া যায় না। পীর হতে হয় ঊর্ধ্বতনদের দোয়া ও অনুমতি সাপেক্ষে এবং নেক আমলের মাধ্যমে। একটি হক্ব তরীকা তথা সিলসিলা কিংবা দরবার প্রতিষ্ঠা করা ও তা ধারণ করা অনেক কঠিন, কিন্তু ভেঙে দেয়াটা খুবই সহজ। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
তিনদিনব্যাপী মাহফিলের শেষ দিন মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম। তিনি বলেন- আমার দাদাজান ছারছীনা দরবারের মুরিদ ছিলেন। ছোটবেলায় বাবা ও দাদার সাথে একাধিকবার ছারছীনা দরবারে আসার সুযোগ হয়েছে। এখানে আসার মাধ্যমে ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শাহ্ সূফী নেছার উদ্দিন আহমদ (রহঃ) এর উপমহাদেশে দীনি সংস্কার সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পেরেছি। প্রায় দেড় শতাধিক বছর ধরে ছারছীনা সিলসিলার খেদমত এই উপমহাদেশে অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের নিকট দোয়া চাই যেন আমরা বাংলাদেশকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে এসে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব শেষ করতে পারি। বিশেষ করে আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আপনাদের পীর ভাইয়ের সন্তান হিসেবে এদেশের খেদমত করতে পারি।
মাহফিলের শেষ দিন ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর উপর আলোচনা করেন- বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হযরত মাওলানা হাফেজ শাহ্ আবু বকর মোহাম্মদ ছালেহ নেছারুল্লাহ, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসার মুফতী মাওলানা মোঃ ওসমান গণি ছালেহী, ছারছীনা আলিয়া মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা মোঃ বোরহান উদ্দীন ছালেহী, বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ হেমায়েত বিন তৈয়্যেব, ছারছীনা দারুচ্ছুন্নাত জামেয়া-এ-নেছারিয়া দীনিয়ার মোহাদ্দিস মাওলানা মোঃ মোহেব্বুল্লাহ আল মাহমুদ প্রমূখ।
অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফুল আলম খান, বরিশালের জেলা প্রশাসক মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মাওলানা শামীম সাঈদী প্রমূখ।
পরিশেষে হযরত পীর ছাহেব কেবলা দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে তিনদিনব্যাপী মাহফিলের আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় লক্ষ লক্ষ মুসুল্লিদের আমীন আমীন ক্রন্দনের ধ্বনী আকাশ-বাতাসে প্রতিধ্বণিত হয়।