নওগাঁয় প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ-হাবিবুর রহমান
নওগাঁর পোরশা উপজেলার বলদাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে শিশুশিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন করেন।বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক হলেও আব্দুল লতিফ নিয়মিত স্কুলে আসেন না। স্কুলে এলেও হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে বাড়িতে গিয়ে দিনভর ব্যস্ত থাকেন খেতখামারের কাজ নিয়ে। স্কুলে ঠিকমতো পাঠদান না হওয়ায় কিন্টারগার্টেন স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করাতে আগ্রহী হচ্ছেন অভিভাবকেরা। ফলে স্কুলে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে। অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের কামারধা গ্রামে বাড়ি আব্দুল লতিফের। তিনি ২০১৫ সাল থেকে বলদাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্কুলের পাশেই বাড়ি হওয়ায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল লফিত নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। তিনি ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না। তার কারণেই বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বলদাহার গ্রামের পাশ্ববর্তী শিবপুর বাজারে শিবপুর আদর্শ কিন্টারগার্টেন স্কুল পরিচালনা করেন আব্দুল লতিফের দুই ছেলে। প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ নিজেই শিক্ষার্থীদের সেই কিন্টারগার্টেনে স্কুলে ভর্তি করাতে অভিভাবকদের উদ্বুদ্ধ করেন। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পাঠদান না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এক সময় বিদ্যালয়টিতে ১৫০- এর অধিক শিক্ষার্থী ছিল। এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বলদাহার গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম ও বলদাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। এছাড়া তিনি স্বেচ্ছাচারি আচরণ করে আসছেন। স্কুলে শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকলেও প্রধান শিক্ষক একটি কক্ষে তালা দিয়ে সেখানে স্টোর রুম করে রেখেছেন। সেখানে অন্য কাউকে ঢুকতে দেন না। সরকারি বিদ্যালয় থেকে বই, খাতা, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ তার দুই ছেলে পরিচালিত কিন্টারগার্টেন স্কুলে নিয়ে যান। এছাড়া স্লিপের (প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বরাদ্দের টাকা) টাকার কোনো প্রকার হিসাব ম্যানেজিং কমিটিকে দেন না। এ বিষয়ে পূর্বে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রকার প্রতিকার পাওয়া যায়নি। আব্দুল লতিফের কারণে বলদাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য এলাকাবাসী তাকে এই স্কুলে আর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তাকে যেন দ্রুত এই স্কুল থেকে অপসারণ করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এর আগে আমার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছিলো। কিন্তু তদন্তের এসব অভিযোগের কোনটাই প্রমাণিত হয়নি। আমার ছেলেরা একটি কিন্টারগার্টেন স্কুল পরিচালনা করছে। আমি কোনো শিক্ষার্থীকে সেই স্কুলে ভর্তি হলে বলেনি।’ পোরশা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এলাকাবাসী মানববন্ধন করে বলদাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তা তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মিললে বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এর আগে লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তর থেকে একটি টিম তদন্ত করে গেছেন। সেই তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় আমরা আছি।’