আরডিএ’র প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট। নয়া কণ্ঠ
প্রকাশিতঃ
বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩
১৫৯
বার পঠিত
আরডিএ’র প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট
মোস্তাফিজুর রহমান ঃ রাজশাহী ব্যুরো চীফ
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু চত্বর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ কামরুজ্জামান এবং তার স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত রাজশাহী অঞ্চল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন তাদের বিরুদ্ধে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে পৃথক দুটি দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। গত বছরের (২০২২) ১ জুন শেখ কামরুজ্জামান ও ২ জুন তার স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলা দুটি করেছিল দুদক।
মামলার অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) বিবরণ অনুযায়ী ২০০৫ সালে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন শেখ কামরুজ্জামান। পরে তাকে এস্টেট অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এই সময়ে সরকারি প্লট ও দোকানপাট বরাদ্দ এবং বিক্রিতে ব্যাপক দুর্নীতি করেন তিনি। এই দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হন। পাশাপাশি স্ত্রী নিশাত তামান্নার নামেও করেন বিপুল সম্পদ ও নগদ টাকা। দুদক ২০১৭ সালে অভিযোগ পেয়ে শেখ কামরুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর দুদক ২০২২ সালের ১ জুন প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকার সমপরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে মঙ্গলবার (২৯ জুন) শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতির মামলা তদন্তকালে তার আরো অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। অভিযোগপত্রে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোট ১ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই পরিমাণ সম্পদ তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের পক্ষ থেকে শেখ কামরুজ্জামানকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী, আয়কর ফাইলে জমা রিটার্ন ও মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান ও তদন্তকালে শেখ কামরুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রাক্কলিত ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১ টাকা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ২০০৪ সালের ২৬(২) ও ২৭(১) এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে গত ১৬ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার্জশিট দাখিলের মঞ্জুরি দেয়া হয়। এরপর ২৯ আগস্ট মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি দায়েরের পর কামরুজ্জামান পলাতক থাকলেও ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে জামিন লাভ করেন।
এদিকে পৃথক দুর্নীতি মামলায় সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের স্ত্রী নিশাত তামান্নার (৩৯) বিরুদ্ধেও একই দিনে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ২১১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু তদন্তকালে তার আরো অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। ফলে অভিযোগপত্রে নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১১৮ টাকা অবৈধভাবে অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, নিশাত তামান্নাকে ২০১৯ সালের ১৭ জুন সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। একই বছরের ৬ আগস্ট তিনি তার সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, নিশাত তামান্না নিজেকে একজন ব্যবসায়ী ও মাছ চাষি হিসেবে দাবি করলেও এর পক্ষে প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি।
নথিপত্রের বিবরণ মতে, নিশাত তামান্না ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৪ টাকা মূল্যমানের সম্পদ অর্জন করেছেন। কিন্তু আয়কর রিটার্ন ফাইল ও দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী তার বৈধ আয় মাত্র ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬৬ টাকা। ফলে তিনি ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১১৮ টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ কামরুজ্জামান বর্তমানে রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া এলাকায় বসবাস করছেন। আর তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার বারখাদা গ্রামে। এছাড়া তার স্ত্রী নিশাত তামান্না রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া মহল্লার নূরুল ইসলামের মেয়ে। তামান্না পবা নতুনপাড়ায় স্বামী সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বাড়িতেই বসবাস করেন।