বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারী, ময়মনসিংহ আওয়ামী রাজনীতির বটবৃক্ষ, সাবেক সফল ধর্মমন্ত্রী ❝বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যার❞ ইন্তেকাল করেছেন। ❝ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন
(৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২ – ২৭ আগস্ট ২০২৩) মতিউর রহমান স্যার ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। তিনি ১২ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৭ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে গঠিত তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২৭ আগস্ট ২০২৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মতিউর রহমান স্যারের মৃত্যুতে ❝ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ, জেদ্দা মহানগর আওয়ামীলীগ, সৌদি আরব এর সাবেক সভাপতি মমতাজ হুসেন চৌধুরী গভীরভাবে শোকাহত , মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
*বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনঃ মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ঢাকা হল বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সাংগঠনিক জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দুইবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় সংসদের ১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪) আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটি’র সভাপতি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সদস্য, জাতীয় সার সমন্বয় ও বিতরণ কমিটি’র সদস্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সনে একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরপর তিনবার সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে মোট তিনবার ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
*মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তার নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।।
*পুরস্কার ও সম্মাননাঃ মতিউর রহমান রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইউনাইটেড কালচারাল কনভেনশন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২০০৫ সালে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ পদকে ভূষিত হন। এছাড়ও তিনি আন্তর্জাতিক জীবনী কেন্দ্র ইংল্যান্ড কর্তৃক ২০০২ সালে ২১ শতকের অসামান্য বুদ্ধিজীবী’ পদকে ভূষিত হন। তিনি অভিনয়, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ১৯৬৭-৬৮ সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতায় বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। তার মৃত্যুতে দেশ এবং জাতি একজন প্রকৃত দেশ প্রেমিক হারিয়েছে বলে আমি মনে করি। এই অভাব পূরণ হবার নয়।