আমের রাজধানী রাজশাহীতে জমে উঠেছে আমের বাজার।
রাজশাহী ব্যুরো ঃ আমের রাজধানি রাজশাহীর হাটে/ বাজারে জমে উঠেছে আমের বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর হাটসহ উপজেলার হাটগুলো এমনকি শহরের আশে পাশে বসা পাইকারি ও খুচরা গোপালভোগ আম কেনাবেচা চলছে জোড়েসরে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমজমাত আম বাজার গুলো। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম গত বারের চেয়ে বেশি। পাইকারিতে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরায় ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন পাইকারির ক্রেতার চেয়ে খুচরা ক্রেতা অনেক কম।
বানেশ্বর ও তাহেরপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি মণ দুই হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগ আম। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুটি আম। বাজারে জাতের প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার আটশো টাকা মণ। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলেছেন ক্রেতারা।
পুঠিয়ার বানেশ্বর ও ঝলমলিয়া হাট ঢাকা – রাজশাহী মহাসড়ক ঘেঁষে উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বসে। তাছাড়া তাহেরপুর হাটটি পুঠিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে । সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক হাট বসলেও, আমের মৌসুমে এখানে প্রতিদিনই হাট বসে। রাজশাহীতে এবার ১৫ মে থেকে মৌসুম শুরু হয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত চলবে বেচাকেনা । প্রতি আম মৌসুমের মত এবারও হাট এলাকায় সব কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে, ফলে সহজেই যেকোনো স্থানে পাঠানো যাবে আম। তবে অনলাইনে যারা আমের ব্যাবসা করছে, তারা আমের গুণগান গেয়ে গোপালভোগ আম ৪০০০/ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করছে । মানের দিক দিয়ে অনলাইনের চেয়ে রাজশাহীর হাটগুলোর আম কোনোঅংশে কম নয় । অভিজ্ঞ মহলের ধারণা অনলাইনের আম ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ভুল বুঝিয়ে অতিরিক্ত দামে আম বিক্রয়ের চেষ্টা করছে ।
হাটে গিয়ে দেখা গেছে, আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ভ্যান এবং নসিমন-করিমনে করে আম নিয়ে হাটে আসছেন। এসব গাড়িতে ৩০ থেকে ৬০টি ক্যারেট আম থাকছে। ভ্যান ও ট্রলির ওপর সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজারে মাচা পেতে বসেছেন বিক্রেতারা। অপেক্ষাকৃত পাকা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আম বিক্রির কৌশল বা ক্রেতা আকর্ষনে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটে দেখাচ্ছেন ও খাওয়াচ্ছেন, খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন।
হাটটিতে আম বিক্রি করতে আসা, কাপাসিয়ার আমচাষি আবুল হোসেন বলেন, কেবলমাত্র আম পাকতে শুরু করেছে। রাতে পাকা আম গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। তিনি বলেন,এবছর তার বাগানে ৪০ টি গাছ আছে। তা থেকে ৮০ ক্যারেট গোপালভোগ বাজারে এনেছি। গত বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি পাচ্ছি। এমন দাম থাকলে এবার বেশি লাভ হবে।’
তাহেরপুর হাটের আম বিক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘২৬ মে রবিবার চলতি মৌসুমে গোপালভোগ আম বেশি বিক্রি হয়েছে। এর আগে গুটি জাতের আম বিক্রি হয়েছিল। গোপালভোগ আম বাজারে আসার পর গুটি জাতের চাহিদা এখন কম। গোপালভোগ আম পাইকারিতে প্রতি মণ ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।’
বাজার জমে উঠেছে জানিয়ে বানেশ্বর হাটের ইজারাদার মাসুদ রানা বলেন, ‘জেলার সবচেয়ে ভালো আমগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালাভোগ, লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাত ও ল্যাংড়া। গত শনিবার থেকে সকল হাট ও বাজারে গোপালভোগ আম উঠা শুরু হয়েছে। এখনও লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া আসতে বাকি। এবার তুলনামূলক ফলন কমের কারণে দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। গত বছর মৌসুমের শুরুতে গোপালাভোগের মণ ছিল এক হাজার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ বছর একই সময়ে মণ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ থেকে তিন হাজার টাকায়। ফলে আশা করা যায়, লোকসান হবে না চাষিদের।’
শহরের আড়ত গুলোর আম বিক্রেতারা বলেন , ‘আড়তে খুচরার চেয়ে পাইকারি ক্রেতা কম। বেশিরভাগ ক্রেতা খাওয়ার জন্য ৫ কেজি , ১০ কেজি হিসেবে কিনছেন , টা খুচরায় ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ২৫ মে গোপালভোগ আম বাজারে এসেছে। একই দিন রানিপসন্দ আসার কথা থাকলেও পরিপক্ব হয়নি। এরপর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত আম গাছ থেকে পাড়া যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি; ৫ জুলাই বারি-৪ আম; ১০ জুলাই আশ্বিনা; ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম পাড়া যাবে। তবে এই তারিখের আগেও চাষিরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে আম পরিপক্ব হওয়া শর্তে পাড়তে পারবেন। এর বাইরে বারোমাসি কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আমের সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। এ বছর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন।